আজ শুক্রবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরে আসছেন। সফরের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। বৈঠকে দুই সরকার প্রধানের আলোচনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের কাঠামোর মধ্যে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চাওয়া হবে।
শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা
২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। তিন বছর পর ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খোলে। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১ জুন থেকে বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। নতুন নিয়মে কর্মী পাঠাতে হলে আবারও সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এবারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নতুনভাবে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় আনতে পারেন বলে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্তে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত ব্যবসায়ীদের অনেকের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যে দেশগুলোতে অর্থ পাচার বেশি হয়েছে, তার মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম।
চলতি বছরের ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতিমন্ত্রী টিয়ং কিং সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএমটুএইচ) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন, যেখানে ভারতের ১ হাজার ২২৩ জন আছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে পিভিআইপি নামে প্রিমিয়াম ভিসা চালু করেছে, যা প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। পিভিআইপি প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন মোট ৪৭ জন বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারী, যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। এমএমটুএইচ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য পঞ্চাশের নিচের বয়সের ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করতে হয়। মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) তৈরি প্রতিবেদনে হিসাব কষে বলা হয়েছে, শুধু এমএমটুএইচ কর্মসূচির মাধ্যমেই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। অথচ এসব অর্থের ৯০ শতাংশই এনবিআরের কাছে অঘোষিত।
বাংলাদেশের কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন, তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। এনবিআর থেকেও মালয়েশিয়ার কাছে একটি তালিকা চেয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে বাংলাদেশ থেকে দুইভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রথমত আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত, সরাসরি হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। এসব অর্থের বড় অংশই অবৈধভাবে আয় করা। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসাসহ অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই অর্থ আয় হয়েছে। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে পুরো টাকাই অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছে।
Editor in Chief
Dulal Ahmed Chowdhury
News
Email: news@newsdiplomats.com
Advertisement
Email: ads@newsdiplomats.com
© The_News_Diplomats || Published from Canada.