মেসি ও রোনালদো
বড় মাপের ফুটবলাররা শুধুই তারকা নন, একেকজন টাকার কুমিরও। আলিশান বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি আর অঢেল সম্পদ—এই তো তাঁদের জীবন। প্রশ্নটি তাই সব সময়ই উঠেছে—ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী ফুটবলার কে, ফুটবল থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন কে কিংবা কোন ফুটবলার কত টাকার মালিক? এ ক্ষেত্রে একুশ শতকের সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়েই ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহ বেশি।
বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’, খেলাধুলার আর্থিক বিষয়াদি ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ‘স্পোর্টিকো’, জার্মানির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যাটিস্টা’, তারকাদের সম্পদ ও আর্থিক বিষয়াদি বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘সেলিব্রিটি নেট ওয়ার্থ’সহ বেশ কয়েকটি বিশ্বস্ত মাধ্যম প্রতিনিয়ত মেসি-রোনালদোদের মোট সম্পদের তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা ফুটবলারদের পারিশ্রমিক, পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তির ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করে থাকে।
মেসির কত টাকা-
লিওনেল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে খেলছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মেসির মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৯০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে ইন্টার মায়ামি বছরে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার (১৪৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা) বেতন দেয়, বোনাস পান আরও ২ কোটি ডলার (২৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা)।
খেলায় অংশ নেওয়া ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিবেচনা করলে ফুটবল থেকে মেসির বার্ষিক আয় ৬ কোটি ডলার (৭২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা) ছাড়িয়ে যায়। মাঠের বাইরে থেকে মেসি আয় করেন স্পনসর ও ক্লাবের জার্সি বিক্রি, অনুমোদন চুক্তি ইত্যাদি থেকে। অ্যাপল, অ্যাডিডাস, পেপসি, হুয়াওয়েই, লেই’স হার্ড রক ক্যাফের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি আছে মেসির। স্পনসর কোম্পানিগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগ হয় মেসির অ্যাকাউন্টে। তাঁর পোশাক কোম্পানিও বেশ মুনাফা অর্জন করছে।
মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি আছে তাঁর। চুক্তি অনুযায়ী, এলএমএসের সম্প্রচার স্বত্ব কেনা অ্যাপল সাবস্ক্রিপশনের রাজস্ব ভাগ পাচ্ছেন মেসি। এমনকি ক্লাবের মালিকানার অংশীদারত্বও আছে। চুক্তির মেয়াদ শেষে তিনি মায়ামির ১০ শতাংশের মালিক হবেন।
মেসি অবসর নেওয়ার পরও যদি মায়ামি তাদের ব্র্যান্ড মূল্য বজায় রাখে, তাহলে সেই ১০ শতাংশের পরিমাণ ২০ কোটি ডলার (২ হাজার ৪৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা) বা এর বেশি হবে। ফোর্বস বলছে, মেসি তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৩০ কোটি ডলার (১৫ হাজার ৮১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা) আয় করেছেন। এর মধ্যে ৯০ কোটি ডলার (১০ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা) এসেছে বেতন থেকে, বাকি ৪০ কোটি ডলারের (৪ হাজার ৮৬৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা) উৎস স্পনসর।
রোনালদোর কত টাকা-
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ইউরোপীয় ফুটবলের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন। রোনালদোর বর্তমান ঠিকানা সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল নাসর। ফোর্বসের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পর্তুগিজ মহাতারকার মোট সম্পদের পরিমাণ ৯২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মুদ্রায় যা ১১ হাজার ২২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে ‘সেলিব্রিটি নেট ওয়ার্থ’-এর হিসাবে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলার (৯ হাজার ৭৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা)।
আল নাসরের দেওয়া বেতন-বোনাস ছাড়াও পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ঈর্ষণীয় চুক্তি, বিভিন্ন খাতে লাভজনক ব্যবসা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করেন রোনালদো। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব, কোয়াইশু ও ওয়েইবো) ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি অনুসারীর মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলার। গত ছয় মাসে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনুসারী সংখ্যা ও ভিউ বাড়ায় আয়ও বেড়েছে।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি আল নাসরে যোগ দেন রোনালদো। ক্লাবটির সঙ্গে তাঁর চুক্তির মেয়াদ ফুরাবে এ বছরের ৩০ জুন। শোনা যাচ্ছে, আল নাসর রোনালদোকে ধরে রাখতে চায়। এ জন্য তাঁকে ক্লাবের ৫ শতাংশ মালিকানাও দেওয়া হতে পারে।
চুক্তি নবায়ন করলে মালিকানার বাইরেও এক মৌসুমের জন্য ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা পাবেন রোনালদো। সেই হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা, সপ্তাহে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা, দিনে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ঘণ্টায় প্রায় ২৬ লাখ, মিনিটে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা ও সেকেন্ডে প্রায় ৭১৬ টাকা আয় করবেন এই তারকা।
ফোর্বসের তথ্যমতে, রোনালদো বর্তমানে বছরে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৩ হাজার ৪৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা) আয় করছেন, যা তাঁকে ২০২৫ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ফুটবলার করে তুলেছে। আল নাসরের হয়ে খেলে রোনালদো পান ২২ কোটি ডলার (২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা), ফুটবলীয় চুক্তির বাইরে থেকে আসে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৭৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা)।
নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘সিআর৭’, নিউইয়র্ক, মাদ্রিদ, আমস্টারডাম, লিসবনসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে গড়ে ওঠা পেস্তানা সিআর৭ লাইফস্টাইল হোটেল থেকে অঢেল অর্থ আয় করেন রোনালদো। এ ছাড়া নাইকি, আরমানি, ইউনিলিভার (ক্লিয়ার শ্যাম্পু), ট্যাগ হিউয়ার, হারবাললাইফের মতো নামীদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি আছে তাঁর। স্পোর্টিকোর হিসাবে, রোনালদো তাঁর বর্ণিল ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১৮০ কোটি ডলার (২১ হাজার ৮৯৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা) আয় করেছেন।
এত কিছুর পরও রোনালদো ও মেসি কিন্তু শীর্ষ দুই ধনী ফুটবলার নন। তাঁদের চেয়েও একজন ধনী ফুটবলার আছেন—নাম তাঁর ফাইক বলকিয়াহ। ব্রুনাইয়ের ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলারের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০০০ কোটি ডলার (২৪৩২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা)।
যুব পর্যায়ে চেলসি, লেস্টার সিটি, সাউদাম্পটনের মতো ক্লাবে ফেলেছেন ফাইক। বর্তমানে খেলছেন থাইল্যান্ডের ক্লাব রাটচাবুরিতে। ব্রুনাই জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। ফুটবলার ছাড়াও ফাইকের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ব্রুনাইয়ের রাজ পরিবারের সদস্য। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর ভাতিজা তিনি। ফাইকের বাবা ব্রুনাইয়ের যুবরাজ জেফরি বলকিয়াহ। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত জেফরি দেশটির অর্থমন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি বিনিয়োগ সংস্থার চেয়ারম্যান।
ব্রুনাইয়ের সব তেলের খনি এবং ভান্ডারের মালিক রাজ পরিবার। তেল রপ্তানি থেকে বিশাল আয়ের প্রায় সবটাই রাজ পরিবারের কোষাগারে জমা হয়। সেই লভ্যাংশের ভাগ পেয়েই ফাইক এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলার।
Editor in Chief
Dulal Ahmed Chowdhury
News
Email: news@newsdiplomats.com
Advertisement
Email: ads@newsdiplomats.com
© The_News_Diplomats || Published from Canada.