ফাইল ছবি
মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার আবার খুলতে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বন্ধ শ্রমবাজর চালু, কর্মী প্রেরণে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করা এবং কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে সারকার কাজ করছে।’
বাংলাদেশে সফর কালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম যৌথ ঘোষণায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও টিকিট জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন,‘ গত মে মাসে বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সে দেশে যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মীকে পাঠানোর আশ্বাস পাওয়া গেছে। কি প্রক্রিয়ায় পাঠানো হবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এইসব বিষয়ে কাজ করছি। তিনি আজ (৫অক্টোবর ) মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব এম টিপু সুলতান প্রবাসন নিউজকে বলেন,‘ মালয়েশিয়া শ্রমবাজার সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত হোক এটা আমরা চাই। ভিসা প্রাপ্ত কর্মী যাঁরা যেতে পারেননি তাঁরা যাতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দ্রুত গমন করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ’
মুভমেন্ট ফর ইথিক্যাল মাইগ্রেশন অফ বাংলাদেশ-এর সভাপতি মোস্তফা মাহমুদ প্রবাসন নিউজকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট মুক্ত, ভিসা ট্রেডিং মুক্ত, ভিসা ফি মুক্ত ও সবার জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জনশক্তি রফতানি করতে পারলে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত হবে।’
মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশি কর্মীরা অবদান রেখে চলেছে। দেশটির নির্মাণ, উৎপাদন ও কৃষি খাতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে দশকের পর দশক। অন্যদিকে এই শ্রমিকরা দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিশাল অবদান রেখে চলেছে।
যে সব দেশ জনশক্তি রফতানিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত তার মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের পরই রয়েছে মালয়েশিয়ার স্থান।
জলবায়ু, পরিবেশ ও সংস্কৃতির মিল থাকার কারণে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে মালয়েশিয়া অনেক আকর্ষণীয় দেশ, বাংলাদেশি কর্মীরা সুনামের সঙ্গে সেখানে কাজ করছে। এই কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের কর্মীর বিপুল ডিমান্ড রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য ওই দেশের বিভিন্ন কোম্পানি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।
বিগত ২২ মাসে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অন্যান্য সুবিধা মিলে এক একজন কর্মী মাসে ৭০/৮০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সার্বিকভাবে এই বেতনে বাংলাদেশি কর্মীদের সন্তোষ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০০৪ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এই দেশে কর্মী গেছে ১২ লাখেরও উপরে। বিভিন্ন সময় নানা কারণে শ্রমবাজার বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের শ্রমবাজরের যাত্রার শুরুর পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী গেছে সাড়ে ১৪ লাখেরও বেশি। দেশটির শ্রমবাজারে নয় শতাংশেরও বেশি দখলে রয়েছে বাংলাদেশি কর্মীদের।
তথ্য মতে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২৩ সালেই দেশটিতে সর্বোচ্চ শ্রমিক যায় বাংলাদেশ থেকে। চলতি বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর যে সর্বশেষ পর্ব শেষ হয় এতে দেশটিতে কর্মী যায় চার লাখ ৭৬ হাজারেরও বেশি।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া বিভিন্ন সোর্স কান্ট্রি থেকে ধাপে ধাপে কর্মী রিক্রুট করে আসছে এবং একটা পর্ব শেষ হওয়ার পর পর শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন সোর্স কান্ট্রি থেকে নেওয়া কর্মীদের বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োগের মাধম্যে সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরে এলে আবার বন্ধ শ্রমবাজার আবার চালু করে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগে শুরু থেকে এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সর্বশেষ ওই মার্কেট চালু হয়। ১৫টি সোর্স কান্ট্রির সঙ্গে দেওয়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কর্মী সংগ্রহের এই পর্ব সম্পন্ন হয় এবং ৩১ মের পর মালয়েশিয়া তার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছেন, বিগত ২২ মাসে ধাপে ধাপে বিএমইটি কার্ড হাতে পাওয়ার পরও নানা কারণে অনেক শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যাননি। শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর দেখা যায় বেশ কিছু কর্মী মালয়েশিয়ায় যায়নি। তথ্য যাচাই বাচাই করলে দেখা যাবে এই সংখ্যা চার থেকে পাঁচ হাজারের বেশি হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র প্রবাসন নিউজকে জানিয়েছেন, বিএমইটি কার্ড এমনকি বিমানের টিকিট হাতে পাওয়ার পরও অনেকে শেষ সময়ে এসে পারিবারিকসহ নানা কারণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। কোন শ্রমবাজরেই বর্হিগমন ছাড়পত্র পাওয়া কর্মীদের শতভাগ প্রবাসে যান না। বিএমইটির মতে যে কোন শ্রমবাজারের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকাকে স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তথ্যে আরো দেখা যায়, চুক্তির পর ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এই বছরের ৩১ মে পর্যন্ত এই ২২ মাসে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেছে চার লাখ ৭২ হাজার ৪৭০ জন, যা সবগুলো সোর্স কান্ট্রি থেকে পাঠানো কর্মীর ৪২.৭ শতাংশ। সবগুলো দেশের কর্মী পাঠানোর হার ৫৭.৩০শতাংশ। এর মধ্যে পাকিস্তানের কর্মী পাঠানোর হার ২.৮ শতাংশ, ভারতের ৬.৭ শতাংশ, মিয়ানমারের ৭.৭ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ১০.২ শতাংশ।
Editor in Chief
Dulal Ahmed Chowdhury
News
Email: news@newsdiplomats.com
Advertisement
Email: ads@newsdiplomats.com
© The_News_Diplomats || Published from Canada.