Sunday, 14 September 2025
The News Diplomats
মুহিবুর রহমান :
Publish : 08:36 AM, 24 August 2025.
Digital Solutions Ltd

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দৌড়: শক্তির অদৃশ্য যুদ্ধ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দৌড়: শক্তির অদৃশ্য যুদ্ধ

Publish : 08:36 AM, 24 August 2025.
মুহিবুর রহমান :

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আজ পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তি। কেউ বলছে, এটি মানব সভ্যতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে; আবার কেউ শঙ্কা করছে, এটি আমাদের কাজ, গোপনীয়তা, এমনকি রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকেও পাল্টে দেবে। কিন্তু আলোচনার আড়ালে যে সত্যটি দ্রুত স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তা হলো-AI আসলে বিদ্যুতের খেলা। প্রশ্ন এখন শুধু কে সবচেয়ে উন্নত চিপ বানাচ্ছে বা কে সবচেয়ে জটিল অ্যালগোরিদম চালাচ্ছে, তা নয়; বরং কে কতটা নিরবচ্ছিন্ন, সস্তা ও টেকসই শক্তি সরবরাহ করতে পারছে। এই প্রতিযোগিতার অগ্রভাগে রয়েছে দুই পরাশক্তি-যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
চীনের অগ্রগতি: কৌশলগত পরিকল্পনার ফল
চীন বিগত দুই দশক ধরে শক্তিকে রাষ্ট্রীয় কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। জলবিদ্যুৎ, সৌর, বায়ু ও পারমাণবিক-সবক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের ফলে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুধু পর্যাপ্ত নয়, অনেক সময় উদ্বৃত্তও থাকে। একেক সময় গ্রিডে রিজার্ভ ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এই উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ গ্রাস করছে ডেটা সেন্টারগুলো। ফলে AI অবকাঠামো সেখানে গ্রিডের জন্য হুমকি নয়; বরং বাড়তি শক্তি শোষণের মাধ্যমে একপ্রকার ভারসাম্য রক্ষাকারী উপাদান। চীন কার্যত AI-কে শুধু প্রযুক্তি নয়, শক্তি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা: জীর্ণ অবকাঠামো ও বাজারের চাপ
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি উল্টো। AI সার্ভারের চাহিদা দ্রুত বাড়লেও বিদ্যুৎ গ্রিড সেই চাপ সামলাতে পারছে না। অবকাঠামো সম্প্রসারণ ধীরগতির, বিনিয়োগ অপ্রতুল, আর খরচ তুলনামূলক বেশি। ফলে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব মাইক্রোগ্রিড বানাতে হচ্ছে, গোপন পারমাণবিক শক্তি চুক্তি করতে হচ্ছে কিংবা সরাসরি গ্যাস জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
এতে খরচ বাড়ছে, ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ছে, আর জাতীয় পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। মূলত, বাজারভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাই এখন তাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধক।
পার্থক্যের মূল: সম্পদ বনাম পণ্য
চীনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো-বিদ্যুৎ একটি কৌশলগত সম্পদ। তাই রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ সমন্বিতভাবে কাজ করে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎকে ধরে রেখেছে একটি পণ্য হিসেবে, যেখানে বাজারের নিয়মই চূড়ান্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যই প্রতিযোগিতায় দুই দেশের অবস্থান নির্ধারণ করছে।
সমাধানের পথ:
১. রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে শক্তি পুনর্গঠন: যুক্তরাষ্ট্রের দরকার একটি নতুন যুগের বিদ্যুৎ অবকাঠামো কর্মসূচি-নবায়নযোগ্য শক্তি, উন্নত পারমাণবিক প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ সঞ্চয়ে বড় বিনিয়োগ।
২. শক্তি-দক্ষ AI উন্নয়ন: “গ্রীন AI” -এর মতো উদ্যোগে কম শক্তি খরচ করে দক্ষ মডেল তৈরির প্রয়োজনীয়তা এখন সর্বোচ্চ।
৩. ডেটা সেন্টার-গ্রিড সমন্বয়: ডেটা সেন্টারগুলোকে শুধু ভোক্তা না ভেবে, শক্তি ব্যবস্থার সক্রিয় অংশ হিসেবে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৪. সরকার–বেসরকারি অংশীদারিত্ব: বাজারকে একক চালক না রেখে, রাষ্ট্রীয় নীতি ও বেসরকারি উদ্ভাবনকে যৌথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: প্রতিযোগিতা বাস্তব হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কারণে শক্তি ও প্রযুক্তি খাতে কিছু সহযোগিতা অপরিহার্য।
AI দৌড় আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে-প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ শুধু গবেষণাগারে নয়, বিদ্যুৎ গ্রিডের ভেতরেও নির্ধারিত হচ্ছে। যে দেশ শক্তিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে কৌশলগত সম্পদে রূপান্তর করবে, তারাই আগামী দিনের প্রযুক্তি নেতৃত্ব দখল করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বন্দ্ব তাই কেবল প্রযুক্তিগত নয়; এটি এক অদৃশ্য শক্তির যুদ্ধ, যা শেষ পর্যন্ত ঠিক করে দেবে-ভবিষ্যতের বিশ্ব প্রযুক্তির লাগাম কার হাতে থাকবে।

OPINION বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম ভিপি-জিএস-এজিএসসহ ২৩ পদে শিবিরের অসাধারণ বিজয় শিরোনাম প্রবাসীরা ভোটাধিকার পাচ্ছেন, ভোট দেবেন ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালটে শিরোনাম কংগ্রেসের রাহুল-প্রিয়াঙ্কা মডেলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসছেন সজীব-সায়মা শিরোনাম শতাধিক স্মার্টকার্ড বিতরণ করতে সিইসি নাসির উদ্দিন এখন কানাডায় শিরোনাম শিবিরের জিএস প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটকারী ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’হুমকি শিরোনাম কানাডার দায়িত্ব ছাড়ছেন আলোচিত হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান