টরন্টো কনস্যুলেটে স্মার্ট জাতীয় পরিচায়পত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিইসি এ এম এম নাসির উ�
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সোসাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ # ভোটারপ্রতি শুধু ডাক বিভাগকে দিতে হবে ৫’শ টাকা # ‘পোস্টাল ব্যালেট বিডি’ নামে একটি অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে # সরকার প্রধানের কোনো চাপ নেই, তারই ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা # নির্বাচনের কেনাকাটাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন # নতুন দলের নিবন্ধন শীঘ্রই
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার পাচ্ছেন। বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিনের দাবি। আগামী ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্টিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডা সফররত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা এবং সোসাল মিডিয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন তিনি।
টরন্টো কনস্যুলেটে স্মার্ট জাতীয় পরিচায়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং প্রবাসীদের ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি আরো জানান, প্রতিটা ভোট যাতে যথাসময়ে ইসিতে পৌঁছে, সেজন্য এক্সপ্রেস সার্ভিস নিতে ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রতি ভোটার প্রতি শুধু ডাক বিভাগকে দিতে হবে ৫’শ টাকা। তিনি বলেন, প্রবাসীদের প্রতি অন্তর্বত্তীকালীন সরকারের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়। সিইসি বলেন, তার কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে নানামুখী চাপ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞের প্রস্তাবনা পর্যালোচনার পর তিনটি প্রস্তাবনা আলোচনার টেবিলে গুরুত্ব পায়। অনলাইন, পোস্টাল ব্যালেট এবং প্রক্সি ভোট। তিনি বলেন, প্রক্সি ভোটে গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। অনলাইন সিস্টেমের পর্যালোচনায় বলা হয়, আমাদের দেশেরতো বন্ধু-বান্ধবের অভাব নেই। যে কোনো সময় হ্যাক হয়ে যেতে পারে। পরে পুরো নির্বাচন প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। বিধায় অনলাইন রিক্স নেবো না। শেষে ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালেটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে ‘পোস্টাল ব্যালেট বিডি’ নামে একটি অ্যাপস্ তৈরীর কাজ চলছে। আশা করি অক্টোবরের মধ্যেই প্রবাসীদের ভোট প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে পারবো।
সিইসি বলেন, মোবাইলে অ্যাপস্ ডাউনলোড করে পোস্টাল ব্যালেটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তাহলে যথাসময়ে তার কাছে ফিরতি খামসহ ব্যালটের নমুনা চলে আসবে। ভোটার শুধু ভোট প্রদান করে খামটা ডাকবাক্সে ছাড়বেন। এজন্য ভোটারকে কোনো ডাকটিকিটি ফি দিতে হবে না। প্রিপেইড সিস্টেমে ভোট প্রদান করবেন। আমরা চেষ্ঠা করছি, প্রবাসীদের জন্য যত সহজ করা যায়, ভোট দিতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। তবে যারা অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করবেন তারা দেশে গিয়ে সরাসরি ভোট দিতে পারবেন না।
এ এম এম নাসির উদ্দি ন বলেন, এবার নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্ট সকলে, কারাবন্দিরা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও পোস্টাল ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। সিইসি বলেন, তার কমিশনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সোসাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রন। এআই দিয়ে নানা কিছু তৈরী করে মুহূর্তের মধ্যে বিভ্রান্তি ছাড়িয়ে দিতে পারে। অবশ্য এসব মোকাবেলায় আমরা একটি সেল করেছি। তারা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। প্রার্থীদের এক প্লাটফরমে এনে মেনোফেস্ট ঘোষনা, নির্বাচনী প্রচার, অর্থ ব্যয়, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তার কমিশনের যাবতীয় প্রস্তুতির বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
সিইসি পরিস্কার ভাবে বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের প্রেসার নেই। সরকার ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের প্রস্তুতিতেও কোনো ঘাটতি নেই। প্রধান উপদেষ্টার নাম উল্লেখ না করে বলেন, আমার উপর যিনি আছেন তার পক্ষে থেকেও কোনো প্রেসার নেই। উনাদেরই ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র মতো অবস্থা। একদল এদিকে টানেতো অন্যরা ওদিকে টানে। উনার কোনো পলিটিক্যাল এজেন্ডা নেই। তারও উপরে আরেকজন (আল্লাহ) আছেন, আমি তার উপর ভরসা করে চলি।
তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি দায়িত্ব নেয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, যারা ছিলেন তারা রিজাইন দিলে ২/৩ মাস নির্বাচন কমিশন শূণ্য ছিলো। একটা আইনের অধিনেই বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা কেউ ডিসেম্বরে, কেউ ফেব্রুয়ারীতে, কেউ জুনে, কেউবা ৫ বছর পর নির্বাচন চায়। কেউ নির্বাচনই চায় না। কিন্তু আমরা কোনো পার্টি না। সরকার যখন বলবে, তখন যাতে নির্বাচন করা যায় সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বড় প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে নতুন ২২টি দলের রিপোর্ট এসে গেলে, নতুন দলের নিবন্ধন শেষ হয়ে গেলে সব কাজ শেষ। ভোট সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু কেনাকাটাও শেষ, ভোটার রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রমও শেষে। ২১ লাখ ডেড ভোট পেয়েছি। ১৮ বছর হয়নি এমন ৪.৪ মিলিয়ন ভোটার পেয়েছি। এখন ভোটার প্রায় পৌনে ১৩ কোটি।
বক্তব্য শেষে সিইসি কয়েকজন প্রবাসীর হাতে স্মার্ট পরিচয়পত্র তুলে দিয়ে বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় তার পাশে ছিলেন কন্সাল জেনারেল মো. ফারুক হোসেন, সিইসর সফরসঙ্গী লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার লুৎফুর রহমান সরকার ও টরন্টো কনস্যুলেটের কাউন্সিলর এবং চ্যান্সেরির প্রধান বিদুষ চন্দ্র বর্মন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রারম্ভিক বক্তব্যে কনস্যাল জেনারেল মো. ফারুক হোসেন সিইসির কানাডা সফরের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
আলোচনা অনুষ্ঠান ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রাক্তন সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক দুলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর প্রেসিডেন্ট আ ন ম ইউসুফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রব চৌধুরী, জাকির খান, কানাডা বিএনপি (পশ্চিম) সভাপতি ও ভোরের আলো সম্পাদক আহাদ খন্দকার, তপন মাহমুদ, ড. আলী করিম, মনিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযুদ্ধা শাহজাহান উদ্দিন। মুফতি আসলাম উদ্দিন আলআজহারী, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও চেয়ারম্যান মিসবাহুল কাদির ফাহিম, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব চৌধুরী রনি, সাবেক সভাপতি সাদ চৌধুরী, কানাডা পশ্চিম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, টরন্টো সিটি বিএনপির সভাপতি মঈন চৌধুরী, জমসেদ নিয়াজ চৌধুরী, রিমন ইসলাম, শেখ এনামুল কবির, মাহমুদা নাসরিন, মো. আসাদুজ্জামান, দেওয়ান ফজলুর রহমান, এনআরবি টিভির সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, প্রবাসী টিভির পরিচালক দীন ইসলাম, নাঈম চৌধুরী, ক্লাইমেট চ্যানেলের সম্পাদক সঞ্জয় চাকী, মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, যুবদল নেতা আলী হোসেন, গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অব টরন্টোর নির্বাচন কমিশনার আরাফাত সুজন আহমদ,
মো. আজিজুল হক, এম এস শাহ কামাল, আহসান কবির, মোহাম্মদ সালাম, মকবুল হোসেন মঞ্জু, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, এ আজিম দেওয়ান, বেলায়েত হোসেন চৌধুরী, মো. মকসুদ আহমদ, আফরিনা আক্তার মনি প্রমুখ।
সিইসি অত্যন্ত ধৈর্য্যসহকারে সকলের প্রশ্নের জবাব দেন এবং এনআইডির সার্ভারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।