টরন্টোয় বিএনপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিল্লুর র�
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পরপর দুবারের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে গণতন্ত্র পুররুদ্ধারে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্ব এবং তারুণ্যের অহংকার, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামের মহানায়ক, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের সুচিন্তিত নির্দেশনায় আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় অর্জনে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি রোববার টরন্টোর বাংলা টাউন ডেনফোর্থে কানাডা বিএনপি (পশ্চিম) আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কানাডা পশ্চিম বিএনপির সভাপতি ও ভোরের আলো পত্রিকার সম্পাদক আহাদ খন্দকারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মুজিবের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এমআর গণি মোস্তফা, নিউ ইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্ববায়ক এবং নিউ ইয়র্কস্থ গোলাপগঞ্জ এসোসিয়েশনের সভাপতি এবাদ চৌধুরী এবং নিউ ইয়র্ক সিটি বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এজিএম জাহাঙ্গীর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, জাতিকে বিভ্রান্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জামায়াত নানা কৌশলে অপচেষ্টা চালচ্ছে। বিএনপি দিল্লী-পিন্ডির দাসত্বে বিশ্বাসী নয়। আমাদের নেতা তারেক রহমান বাংলাদেশের জনগণের শক্তিকেই বিশ্বাস ও সম্মান করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের লজ্জ্যা থাকা উচিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পরাজিত হওয়ার পর জামায়াত নামে তারা আজ রাজনীতি করা উচিত নয়। রাজনীতি করতে হলে তাদের এই নাম পরিবর্তন করা উচিত। তিনি বলেন, জামায়াত যদি সত্যিই গণতন্ত্র চায়, তাহলে তাদের উচিত বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে জনগণের ভোটাধিকার ফেরানো এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সত্যিকারের সহযোগিতা করা। কিন্তু তারা তা না করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরী করছে, ফ্যাসিস্ট পলাতক শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখছে। তাদের এই দুঃস্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ কখনও বাস্তবায়ন হতে দেবে না।

৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক দিকগুলো তুলে ধরে জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক—যে দিন সৈনিক ও জনতার অভূতপূর্ব ঐক্যে জাতীয় স্বার্থ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, সেনাবাহিনী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এই দিনেই আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সাহসী সৈনিক, স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের পুনর্জাগরণের প্রতীক — শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে দর্শন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা আজও আমাদের রাজনীতির পথনির্দেশক।
তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আমারা প্রবাস থেকে সবাই দেশে যাবো। আমাদের প্রত্যেককে এখন থেকেই প্রার্থী না দেখে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে।
কানাডা পশ্চিম বিএনপির সভাপতি আহাদ খন্দকার বলেন, আজ আমরা প্রবাসের মাটিতে, দূর কানাডায় বসে স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন— ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ফিরে পায় স্থিতি, পায় নতুন আশা, পায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পরিচয়।
তিনি জনগণকে বিশ্বাস করতেন, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন— বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে।আজও সেই দর্শন আমাদের সংগ্রামের মূল প্রেরণা।

বিএনপি নেতা এবাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, শক্ত হতে হবে, এবং ধানের শীষের পতাকা উঁচু রাখতে হবে। আমরা বিএনপি, দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে— ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের জন্য নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায়, কমিউনিটিতে, বন্ধু-পরিজনের সঙ্গে আলাপে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে। আমরা সবাই চাই—গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার ফিরুক, বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা আসুক, এবং দেশের জনগণ যেন শান্তি, ন্যায় ও সমতার বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে।
নিউ ইয়র্ক বিএনপি নেতা এজিএম জাহাঙ্গীর বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্তের অবসান ঘটাতে হবে। তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করে নির্বাচনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান মিসবাহুল কাদির ফাহিম বলেন, কানাডায় অবস্থানরত আমরা সবাই প্রবাসী হলেও, আমাদের হৃদয় এখনো বাংলাদেশের মাটিতে স্পন্দিত । তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের ইতিহাসই প্রমাণ করে— জনতার ঐক্যের কাছে কোনো অন্যায় টিকতে পারে না। আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই এবং বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রতিরোধে সামাজিক মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

প্রবাসে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি মাহবুব চৌধুরী রনি বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক ও জনতা একত্রিত হয়ে জাতিকে রক্ষা করেছিল ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার হাত থেকে। সেই দিনই আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা— শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান,যিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যের শক্তি কতটা অপরাজেয় হতে পারে। শহীদ জিয়ার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ফিরে পায় স্থিতি, পায় নতুন আশা, পায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পরিচয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাহস ও প্রজ্ঞা দিয়ে। তার নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশে সারা বিশ্বে পরিচিত হবে একটি দাসত্ব ও আধিপত্য মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে।

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অন্টারিও বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, টরন্টো সিটি বিএনপির সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী, কানাডা বিএনপি নেতা মহিদুর রহমান, মকবুল হোসেন, জুমেল চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি, অন্টারিও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু জহির সাকিব, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর সাবেক সভাপতি ছাদ চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাব্বির চৌধুরী লিটন, মমিনুল হক, ডা. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অন্টারিও বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমন চৌধুরী, নাঈম চৌধুরী, সাকিব হোসেন, কানাডা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রেহানা আক্তার, যুবদল নেতা আলী হোসেন, বেলাল আহমদ চৌধুরী, সুহেলুজ্জামান খান ও রাহেলুজ্জামান রাহেল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, কানাডা পশ্চিম বিএনপি, অন্টারিও বিএনপি, টরন্টো সিটি বিএনপি এবং যুবদল, ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভার শুরুতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন প্রবীন বিএনপি নেতা টরন্টো সিটি বিএনপির সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী।

