Wednesday, 06 August 2025
The News Diplomats
নিজস্ব প্রতিবেদক :
Publish : 02:39 PM, 05 August 2025.
Digital Solutions Ltd

গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের বনভোজন

নতুন-পুরানের মিলনমেলায় টরন্টোর মর্নিংসাইড পার্ক যেন একখন্ড গোলাপগঞ্জ

নতুন-পুরানের মিলনমেলায় টরন্টোর মর্নিংসাইড পার্ক যেন একখন্ড গোলাপগঞ্জ

Publish : 02:39 PM, 05 August 2025.
নিজস্ব প্রতিবেদক :

সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫। এক অসাধারণ আনন্দময় দিন কাটিয়েছেন কানাডার টরন্টো বসবাসরত গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাজারও মানুষ। গোলাপের সুবাস ছড়িয়েছেন মর্নিংসাইড পার্কে। দিনব্যাপি আনন্দ-উৎসব, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা ও খেলাধুলায় মেতেছিলেন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা। সবাই যেন ছুটে এসেছেন এবং সারাদিন খুঁজে বেড়িয়েছেন শিকড়ের সন্ধান। মনে হয়েছে মর্নিংসাইড পার্ক যেন একখন্ড গোলাপগঞ্জ।
সোমবার ছিলো টরন্টোর অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন সামাজিক সংগঠন ‘গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অব টরন্টো’ এর ফ্যামেলী এন্ড ফ্রেন্ডস্‌ গেট টুগেদার’ ২০২৫। প্রতি একবছর অন্তর এই বনভোজনের আয়োজন করে গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন। প্রায় ৩ মাস আগে থেকেই চলছিলো নিরলস প্রস্তুতি। শেষ এক সপ্তাহর প্রস্তুতিতে দম ফেলার সময় ছিলো না কনভেনিং কমিটি ও কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দের। এবারের বনভোজনের আরেকটি বৈশিষ্ঠ ছিলো- পুরাতনদের সঙ্গে নতুনদের সম্মিলন।

গত দুই বছরে অসংখ্য নতুন পরিবার কিংবা তরুণ-যুবক কানাডায় পাড়ি জামিয়েছেন বুকভরা আশা আর আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে। একে অন্যের সঙ্গে যেন দেখা হয়েছে দীর্ঘদিন পর। বড় পরিসরে নতুন-পুরানের এই মিলনমেলায় একে অন্যের সঙ্গে প্রাণখোলা গল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তারা। পরিচিত-অপরিচিত একে অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি কেউ। গোলাপগঞ্জবাসীর সঙ্গে সিলেট বিভাগসহ বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন।


সকাল ১০টা থেকে সংগঠনের কর্মকর্তারা টেন্ট তৈরী, চেয়ার বসানোসহ নানাবিধও কাজের মাধ্যমে সকলের জন্য উপভোগ্য করে তুলেন বনভোজন স্পট। দুপুরে একে একে পরিবার পরিজন নিয়ে লোকজন আসা শুরু করলে তাদেরকে স্বাগত জানান গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অব টরন্টোর নেতৃবৃন্দ। এরপর সংগঠনের সহকর্মি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনের আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা করেন সভাপতি নেওয়াজ চৌধুরী সাজু, আহবায়ক যুবায়ের আহমদ সিপিএ ও সাধারণ সম্পাদক সাবির আহমদ শাহিন। দুপুর দুইটার মধ্যে হাজারও নারী-পুরুষ, শিশু কিশোরের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠে মর্নিংসাইড পার্ক। শুরু হয় খাবার পরিবেশন। নারী-পুরুষ আলাদা সারিবদ্ধ হয়ে অত্যন্ত সশৃঙ্খলভাবে খাবার সংগ্রহ করেন।


খাবারের মেনু ছিলো খুবই রুচিশীল এবং ব্যতিক্রম। গোলাপগঞ্জের ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা, মোট ১২টি নামের সঙ্গে মিলিয়ে ১২ পদের ভর্তা ছিলো খুবই আকর্ষণীয়। মুখে মুখে আলোচনায় ছিলো ভর্তার স্বাধ। চিকেন রোস্ট, বিফ রেজেলাসহ পর্যাপ্ত পরিমান খাবার ও সুসাধু রান্নায় অতিথিরা ছিলেন খুবই সন্তুষ্ঠ। সংগঠনের সদস্যবৃন্দ এবং ভলন্টিয়াররা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সবার প্লেটে খাবার তুলে দেন। দিনব্যাপি ছিলো নানান রকমের মুখরোচক খাবারও। জিলাপি, ঝালমুরি-চানাচুর, সিলেটের ঐতিহ্যপ্রিয় চা ও পান-সুপারি।


আয়োজন ছিলো শিশু-কিশোরদের নানান রকমের খেলাধুলা, প্রতিযোগিতা, বড়দের হাড়িভাঙা, নারীদের বালিশ বদল। বয়স ভুলে সিনিয়ররাও এসব প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন। ব্যস্ত প্রবাস জীবনের ফাঁকে সবাই বনভোজনের আড্ডায় গোলাপগঞ্জের গ্রামে, হাটে, মাটে, ঘাটে, স্কুল-কলেজের বারান্দায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন।
দিনের সকল আয়োজন শেষে বিকালের আনুষ্ঠানিকতায় ফ্যামেলী এন্ড ফ্রেন্ডস্‌ গেট টুগেদার’২০২৫ এর আহ্বায়ক ও গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক যুবায়ের আহমদ সিপিএ এবং সাধারণ সম্পাদক সাবির আহমদ শাহিন এর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি নেওয়াজ চৌধুরী সাজু। এরপর একে একে বিভিন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।


বনভোজনে সারাদিন গোলাপগঞ্জবাসীর সঙ্গে ছিলেন সিলেট তথা বাংলাদেশের রত্ন, কানাডার মুল ধারার রাজনীতিতে অত্যন্ত সুনাম ও দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া এনপিপি ডলি বেগম। তিনি তার বক্তৃতায় গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনকে চমৎকার এবং সুশৃঙ্খল এই আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দেশে এমনকি কানাডাও পিছিয়ে পড়া সমাজের উন্নয়নে গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আমাকে অভিভূত করে। গোলাপগঞ্জবাসীর দাওয়াত আমি কখনও মিস করি না।


অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের টাইটেল স্পন্সর রাফি আহমেদ, ব্যারিস্টার আরিফ হোসেন, পাওয়ার স্পন্সর মুর্শেদ নিজাম সিপিএ, সংগঠনের অন্যতম সদস্য ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাদ চৌধুরী, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব চৌধুরী রনি, মিসবাহুল কাদির ফাহিম, সাব্বির চৌধুরী লিটন, ভাইস প্রেসিডেন্ট রিফাত চৌধুরী, মঈন চৌধুরী, মিশকাত আহমদ চৌধুরী, মো. মনজুর আহমদ, সমাজ সেবা সম্পাদক জনাব আলী হোসেন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক জনাব সেলিম আহমেদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জনাব জাহিদুল ইসলাম (জাহেদ), রিয়েলটর জবরুল আহমদ, ইউনুসুর রহমান, রেহান উদ্দিন, মিজানুর রহমান, জুয়েল আহমদ, মনসুর আহমদ, সাজলু লস্কর প্রমুখ। এছাড়াও অসংখ্য সদস্য পুরো আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন। যা আগত অতিথিদের মধ্যে ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছে।


অনুষ্টানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিলো র‌্যাফেল ড্র। সংগঠনের অন্যতম দুই কর্মকর্তা, টরন্টোয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ বিশিষ্ট রিয়েলটর সাব্বির চৌধুরী লিটন এবং তরুণ রিয়েলটর জবরুল আহমদ র‌্যাফেল ড্র’র প্রথম পুরস্কার টরন্টো-ঢাকা টরন্টো বিমান টিকিট ফিগট করেন। দ্বিতীয় পুরস্কার ই-বাইক প্রদান করেন তানভীর আহমদ ও তৃতীয় পুরস্কার প্রদান করেন মাসুদ আহমদ।


অনুষ্ঠানে টরন্টোয় কমিউনিটির প্রবীন ব্যক্তিত্ব জালাল চৌধুরী, ইজলাল আহমদ চৌধুরী, হাজী নূর উদ্দিন, স্কাউটস ব্যক্তিত্ব মুবিন আহমদ জায়গীরদার, প্রবীন সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মিন্টু, মোস্তাক আহমদ, হুমায়ুন চৌধুরী, শওকত চৌধুরী, শেখ সালাম, আবু সাঈদ ইমানি, ব্যারিস্টার সামস সামছু্দ্দিন, ব্যারিস্টার ওমর জাহিদ, রিয়েলটর এবাদ চৌধুরীসহ সিলেট বিভাগের অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সামগ্রিকভাবে একটি সুশৃঙ্খল এবং আনন্দময় দিন উপহার দেয়ায় গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের ভূয়সী প্রশংসা ও অভিনন্দন জানিয়ে অনুষ্ঠানের অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা ভবিষ্যতে সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বনভোজনে অংশগ্রহণকারী নারী ও শিশুদের স্বাগত জানানো, সুশৃঙ্খলভাবে খাবার পরিবেশন ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের নারী সদস্যবৃন্দ বিশেষ করে সকল ভাবীদের (শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহধর্মিনী) তৎপরতা ছিলো খুবই প্রশংসনীয়।


অনুষ্টানের সমাপ্তিতে সভাপতি নেওয়াজ চৌধুরী সাজু ও আহবায়ক যুবায়ের আহমদ সিপিএ উপস্থিত প্রিয় গোলাপগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানান। বনভোজনকে সফল করে তুলতে যারা আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেই বিশিষ্ট জনদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সারাদিন যারা পরিশ্রম করে অনুষ্টানকে সফল ও আনন্দদায়ক করে তুলেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তারা টরন্টো শহরে বসবাসরত সকল গোলাপগঞ্জবাসীকে গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন অব টরন্টোর সদস্য পদ গ্রহনের আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ নবাগতদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পুরাতনদের প্রতি আহ্বান জানান।


অনুষ্ঠান শেষে মো. জিয়া নামের একজন প্রবাসী তার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন উৎসব ২০২৫ইং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এক অবিস্মরণীয় দিন!
গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশন আয়োজিত আজকের উৎসব ছিলো সত্যিই আনন্দঘন, প্রাণবন্ত এবং মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এই আয়োজন শুধু একটি মিলনমেলা নয়, বরং এটি ছিলো আমাদের শিকড়, সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সঙ্গে এক নতুন করে সংযোগ স্থাপনের উপলক্ষ। পরিবারের সকল সদস্য ও প্রিয় বন্ধুদের নিয়ে একত্রে এত আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরে সত্যিই ধন্য মনে করছি। প্রাণখুলে হাসা, সুস্বাদু খাবার, সংগীত, নাচ, শিশুদের খেলা — সবকিছু মিলে যেন এক টুকরো বাংলাদেশের ছোঁয়া পেলাম প্রবাসের মাটিতে।


এই আয়োজনের জন্য গোলাপগঞ্জ ফাউন্ডেশনকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। এমন উৎসব আমাদের একে অপরের আরও কাছে এনে দেয়, ভালোবাসা ও বন্ধনের বন্ধন দৃঢ় করে তোলে। পরের বছর আবার দেখা হবে, ইনশাআল্লাহ।

BD EXPAT বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম নতুন-পুরানের মিলনমেলায় টরন্টোর মর্নিংসাইড পার্ক যেন একখন্ড গোলাপগঞ্জ শিরোনাম প্রবাসী যোদ্ধার সম্মাননা পেলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাইদ আহমদ শিরোনাম ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে ইসিকে চিঠি দেবেন প্রধান উপদেষ্টা শিরোনাম গণ–অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে: ড. ইউনূস শিরোনাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় ‘মঞ্চ ৭১’-এর আত্মপ্রকাশ শিরোনাম ২৮ দফা জুলাই ঘোষণাপত্রে যা বললেন ড. ইউনূস