রাজনীতিকদের জি ভিসা করায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় # প্রধান উপদেষ্টার গাড়ি বহর থেকে নামিয়ে এনে সাধারণ ডেস্কে ইমিগ্রেশন করা হয় # বিশেষ লাউঞ্জের পরিবর্তে বের করা হয়েছে সাধারণ বহির্গমন দিয়ে # তথ্য গোপন করায় তোপের মুখে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী শীর্ষ রাজনীতিকদের নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ কর্মিদের হাতে অপমান-অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ‘সক্ষমতা’ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিজ্ঞদের মতে, মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে রাজনীতিকরা অপদস্থ হয়েছেন । প্রশ্ন উঠেছে ঘটনা পরবর্তী মিশনের ব্যাখ্যা নিয়েও। একাধিক সিনিয়র কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনও এমন বিশৃঙ্খলার নজির নেই। আর এই বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি স্বয়ং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে। রাজনৈতিক নেতাদের ডেলিগেশনে যুক্ত করা হলেও ইউএনজিএ-তে অংশগ্রহণের জন্য তাদের ‘জি ভিসা’ না করেই বি-১, বি-২ ভিসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে ইউএনজিএ’র বিশেষ ডেস্কে ইমিগ্রেশন করার পরও প্রধান উপদেষ্টার গাড়ি বহর থেকে রাজনীতিকদের নামিয়ে এনে ফের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাধারণের ইমিগ্রেশন ডেস্কে। এরপর সাধারণ বহির্গমন দিয়ে তাদের বের করার ফলে অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। জি ভিসায় না আসলে এই অবস্থা হবে, এটাতো মিশন কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল শীর্ষ কর্মকর্তার জানা থাকার কথা। মিশন বা মন্ত্রণালয় আগাম কি ব্যবস্থা নিয়েছিল? নাকি চরম অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে তারা পাত্তা দেয়নি? নাকি জানতোইনা? বোঝা যাচ্ছে যে, ঐ ডেলিগেশন সদস্যদের আগে এলার্ট করা হয়নি। এরকম ক্ষেত্রে (UNGA এর জন্য G visa) কিন্তু ঢাকার ইউএস মিশন স্বল্প সময়ে ভিসা দিয়ে দেয়। এমন উচ্চ স্পর্শকাতর বিষয়েতো সর্বোচ্চ সতর্কতার বিকল্প নাই। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন যথেষ্ট সময় থাকার পরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি প্রধান উপদেষ্টা ঘটা করে রাজনীতিকদের তার সফরসঙ্গী করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনীতিকদের গুরুত্ব দেয়নি? তাদের নামে ক্রেডেনশিয়াল ইস্যু করেনি? নাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অজ্ঞতার কারণে ডেলিগেশনে যুক্ত করার পরও রাজনীতিকদের ভিজিটর হিসাবে দেখা হয়েছে। তিনদিন অতিবাহিত হলেও সরকার দায়িদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কিংবা পররাষ্ট্র সচিব এবিষয়ে স্পষ্ঠ কোনো বক্তব্য দেননি। জাতিসংঘের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন না করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিশনের ব্যাখ্যাকে দায়সারাও বলেছেন তারা।
এয়ারপোর্টের ঘটনা সম্পর্কে জামায়াতের নায়েবে আমির মোহাম্মদ সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের নিউইয়র্কের একটি বাংলা পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিলেও বিএনপি মহাসচিব এখনও তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দেননি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, প্রতিবছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অন্তত ২ মাস আগে সকল সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক ও ব্রিফিং করে নিখুঁতভাবে বিস্তারিত বর্ণনা দেয় জাতিসংঘ। এই ব্রিফে হেন কোনো বিষয় নেই যা উল্লেখ থাকে না।
সুত্র জানায়, ইউএনজিতে অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ক্রেডেনশিয়াল ইস্যু করে। এই তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ভিসা নিয়ে জটিলতার কোনো সুযোগ নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ রাজনৈতিক নেতারা এই ডেলিগেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের কারো যদি বি-১, বি-২ ভিসা থেকে থাকে, তাহলে ক্রেডেনশিয়াল ইস্যুর পর কিংবা ডেলিগেশনে যুক্ত হওয়ার পর তাদের ’জি ভিসা’ করার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। কারণ জি ভিসা নিয়ে ইউএনজিতে অংশগ্রহণের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়ে থাকে মিশনগুলোকে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের গাফিলতি কিংবা গুরুত্বহীনতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
সুত্রমতে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রায় সকল দেশের ডেলিগেশন ইউএনজিতে অংশ নিয়ে থাকে। এই সময়ে জেএফকে বিমানবন্দরে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সবকিছু পরিচালনা করা হয়।
প্রত্যেকটি দেশের ডেলিগেশনের ইমিগ্রেশনের জন্য বসানো হয় বিশেষ ডেস্ক। রেগুলার ডেস্কে ইউএনজিএ ডেলিগেশনের ইমিগ্রেশন করা হয় না। ইমিগ্রেশনের পর ডিপার্চার লাউঞ্জ দিয়ে প্রতিনিধিদলকে বের করে নেয়া হয়। প্রথমে ভিভিআইপি এবং পরে তাদের সফরসঙ্গীদের বের করা হয়। ডেলিগেশন সদস্যরা চলে যাওয়ার পর তাদের লাগেজ সংগ্রহ করে হোটেলে পৌঁছে দেন মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এক্ষেত্রে সাধারণ বহির্গমন পথে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে ইউএনজিএ ডেলিগেশন বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ডেলিগেশনের ক্ষেত্রে ঘটেছে তার ঠিক উল্টো। সরকারি কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ডিপার্চার লাউঞ্জ দিয়ে ঠিকই বের হয়ে গেছেন। কিন্তু ভিজিট ভিসা থাকার কারণে রাজনীতিক নেতাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে ফের নেয়া হয় রেগুলার ইমিগ্রেশন ডেস্কে। সেখানে তাদের ফিঙ্গার দিতে হয়।
এরপর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কোনো ধরণের নিরাপত্তা ছাড়াই একজন প্রটোকল অফিসার দিয়ে সাধারণ বহির্গমন পথ দিয়ে বের করা হয়। ফলে বাহিরে বের হয়েই তারা বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন এবং চরমভাবে অপদস্থ করা হয় শীর্ষ এসব রাজনীতিকদের। যা বিগত দিনে কখনও হয়নি।
অন্তর্বর্ত্তীকালীন সরকার প্রধানের এই সফর ঘিরে উত্তেজনা চলছে বেশ কদিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে আগেই। এরপরও বাংলাদেশ মিশনের কোনো বাড়তি সতর্কতা ছিলো বলে মনে হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও। কেউ কেউ বলেছেন, এসব বিষয় সময়ে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে মিশন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা গুরুত্ব না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে।
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানা পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে “মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রথমে আমাদের চিফ এডভাইজারের বহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল, ভিসার ধরন ভিন্ন। যারা সরকারি কর্মকর্তা, তাদের ভিসা জি-ওয়ান, আর আমাদের ভিসা ছিল সাধারণ পর্যটক ভিসা। নিয়ম অনুসারে, জি-ওয়ান ভিসার ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমাদের ভিসার ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। এ কারণে একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয় এবং পরে আমরা হেঁটে ইমিগ্রেশনে চলে যাই।
বিমানবন্দরের ঘটনায় বাংলাদেশ মিশনের ত্রুটি থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা যথাযথভাবে আমাদের অবহিত করেনি যে কী ঘটছে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা যদি একসঙ্গে বের হতাম, তাহলে হয়তো হামলাকারীরা আমাদের কাছে আসত না।”
জানাগেছে, প্রতিবছর ইউএনজিএ’র সময় নিউইয়র্কের আশপাশ বিভিন্ন মিশন থেকে কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব পালনে নেয়া হয় জাতিসংঘ মিশনে। কিন্তু এইবার ইউএনজিএ ব্যবস্থাপনায় মিশনে অভিজ্ঞ কোনো কর্মকর্তা না থাকলেও আশপাশ মিশন থেকে কর্মকর্তাদের না নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জুনিয়র কর্মকর্তা এবং সুদুর নেপাল থেকে একজন কাউন্সিলরকে ইউএনজিএ অভিজ্ঞ হিসাবে আনা হয়। সুত্রমতে, সুয়েব আব্দুল্লাহ নামের এই জুনিয়র কর্মকর্তাকে কয়েকমাস আগে জাতিসংঘ মিশন থেকে বদলী করা হয় নেপালে। একজন ব্রিলিয়েন্ট ও প্রফেশনাল কর্মকর্তা হিসাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী এর আগে নেপালে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ফলে পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই আশপাশ দেশ থেকে কর্মকর্তা না নিয়ে নেপাল থেকে নিয়ে আসা হয় সুয়েব আব্দুল্লাহকে। এনিয়েও এখন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও সকল উপ-দূতাবাস এবং কানাডার হাইকমিশনসহ ইউরোপেরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ডেপুটি বা মধ্য পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রাইস পোস্টিং পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে মে, জুন, জুলাই মাসে কিংবা সরকারবিহীন সময়ে গত বছরের আগস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে। জুলাই বিপ্লবে সরকারের পক্ষে সক্রিয়া থাকা আওয়ামী ঘরনার এসব কর্মকর্তাদের বদলী আদেশ বাতিল না করে সাবেক সচিব মাসুদ বিন মোমেন তাদেরকে নিরাপদে দেশ ছেড়ে বদলীকৃত স্থানে যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টাও বিগত সরকারের এসব বদলী আদেশ বাতিলের কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে এসব কর্মকর্তাদের ইউএনজিএতে নেয়া হয়নি।
সুত্র আরো জানায়, মুল অধিবেশন কক্ষে বাংলাদেশের জন্য সিট বরাদ্দ থাকে ৬টি। গ্যালারিতে দেয়া হয় ২৫টি। তবে মিশনের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে তা বাড়ানো। অতীতে শতাধিক সিট নেয়ার নজিরও রয়েছে। এবার সর্বক্ষেত্রে চরম ব্যথতার পরিচয় দিয়েছে মিশন। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সামগ্রিক বিষয়াদি দেখতে, বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রত্যেক দেশের মিশনে আমেরিকান সিক্রেট সার্ভিসের একজন কর্মকর্তাকে যুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলায় মিশন কর্মকর্তারা তাদের হাতে থাকা ইউএন নির্দেশিত কোনো সুযোগ কাজে লাগাননি। বিমানবন্দরে তাদের তৎপরতায় মনে হয়েছে, তারা চরম অসহায়, সমন্বয়হীন এবং অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিমানবন্দরে থাকলেও তারাও যথাযথ সমন্বয় করতে পারেননি।
অনেকে মনে করেন, দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর যেভাবে স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে, রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে দেয়া হচ্ছে না। তাতে এখানে আরো বড় রকমের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারতো। কিন্তু গালিগালাজ ও ডিম ছুড়ে অপদস্থ করা ছাড়া বড় রকমের কিছু ঘটেনি। অথচ রিতিমতো তাদেরকে বিক্ষোভকারীদের হাতে তুলে দেয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো।
এদিকে শীর্ষ রাজনীতিকদের অপদস্থ করা নিয়ে দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বৃহৎ দল হিসাবে বিএনপি কর্মিরা এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছে না। জাতিসংঘ মিশনের ব্যাখা তারা প্রত্যাত্থান করে বলেছে, এই ঘটনার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকার রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তাদের দলকে বলতে পারতো। এই ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও করেছেন তারা। জামায়াত নেতাকে তাদের কর্মিরা এই গ্রুপ থেকে আলাদা করে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
মিশনের একটি সুত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খুব একটা গুরুত্ব দেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকেও সেরকম কোনো বিশেষ নির্দেশনা ছিলো না। সরকারের পদধারীদের নিয়েই তারা ব্যস্ত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ও তার বহরের উপদেষ্টা-কর্মকর্তারা বিমানবন্দর ছাড়ার পর মাত্র একজন কর্মকর্তার উপর রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে দায়িত্বশীলরাও বিমানবন্দর ছাড়েন।
জানাগেছে, দলের মহাসচিবকে স্বাগত জানাতে জেএফকেতে কয়েক’শ বিএনপি নেতাকর্মি উপস্থিত ছিলেন। একজন কেন্দ্রীয় নেতা তাদেরকে বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় করে দিয়ে নিজে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতাকে নিয়ে চলে যান মহাসচিবের হোটেলে। অথচ বিএনপি কর্মিরা উপস্থিত থাকলে আওয়ামী লীগের এসব কর্মীরা আশপাশ দিয়েও আসার সুযোগ পেতো না। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সুত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা বিমানবন্দর ছাড়ার পরপরই একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গিয়াস আহমদকে খুদে বার্তা এবং ফোন করে জানান, ভিসা জটিলতার কারণে ইমিগ্রেশনে দেরি হওয়ায় বিএনপি মহাসচিবসহ রাজনৈতিক নেতারা এখনও এয়ারপোর্টে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা বিএনপি নেতাদের জানান, মহাসচিবসহ নেতাদের ৪ নম্বার টার্মিনালের বহির্গমন পথ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মিশনের গাড়ি অপেক্ষমান আছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, আনোয়ার হোসেন খোকন ও গিয়াস আহমদ বিষয়টি অপেক্ষমান নেতাকর্মিদের গোপন রেখে তারা সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, নেতারা হোটেলে চলে গেছেন, সবাই যারযার মতো চলে যান। নেতাকর্মিদের বিদায় করে তারা দুজন মহাসচিবকে রিসিভ করতে হোটেল রিসিপসনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে এয়ারপোর্টে অনাকাঙ্খিত ঘটনার খবর পেয়ে বিএনপির অনেকেই দ্রুত এয়ারপোর্টে ফিরে আসেন। তারা দেখতে পান, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আওয়ামী লীগের অনেকেই দ্রুত সটকে পড়ছে। আর নেতাদের নিয়ে মিশনের গাড়িও এয়ারপোর্ট ত্যাগ করছে।
সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো কমিটি নেই। আন্তর্জাতিক সম্পাদক নিজের পছন্দের লোককে দিয়ে কমিটি করতে না পেরে আটকে রেখেছেন। ইউএনজিএতে মহাসচিবের আগমন নিয়ে নিউইয়র্কে দলের বিভিন্ন কর্মসূচির কোঅর্ডিনেটরের দায়িত্ব নিয়ে দুদিন আগেই খোকন নিউইয়র্ক আসেন। এয়ারপোর্টে কিভাবে নিজে ফুলেল সংবর্ধনা পাবেন, কিভাবে সরকারের ইউএনজিএ প্রতিনিধি দলে যুক্ত হবেন, এসব নিয়ে লবিয়িংএ ব্যস্ত ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র নেতারা তার কাছে ছিলেন গুরুত্বহীন। মহাসচিবের কাছে নিজকে জাহের করতে এয়ারপোর্ট থেকে সবাইকে বিদায় দিয়ে গিয়াস আহমদকে নিয়ে চলে যান হোটেলে। অথচ বিএনপি কর্মিরা এয়ারপোর্টে থাকলে আওয়ামী লীগ কর্মিরা পাশে যাওয়ারই সুযোগ পেতো না।
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিস্ট একটি সুত্র জানায়, এই ঘটনায় বিস্তারত জেনে আনোয়ার হোসেন খোকন ও গিয়াস আহমদের উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন তারেক রহমান। আর মহাসচিব রাগে ক্ষোভে প্রথমে তাদের সঙ্গে দেখাই করতে চাননি। ক্ষুব্ধ তারেক রহমান মঙ্গলবার রাতেই খোকনকে লন্ডন ফিরে যেতে নির্দেশ দেন।
সুত্র আরো জানায়, আনোয়ার হোসেন খোকনের অতি ঘনিস্টজন হলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও ইউএনজিএ ডেলিগেশনের সদস্য হুমায়ুন কবির। পরিস্তিতি আচ করতে পেরে হুমায়ুন কবির তাকে সঙ্গে নিয়ে মহাসচিবের কক্ষে যান। এসময় মহাসচিব প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ‘তুমি ব্যর্থ’ বলে খোকনকে বকাঝকা করেন। যুক্তরাষ্ট্রে দলের কমিটি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন বলে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার ঘনিস্ট একটি সুত্র জানিয়েছে। অবশ্য হুমায়ুন কবির লন্ডনে কথা বলে খোকনের দ্রুত ফিরে যাওয়া আটকিয়েছেন বলে জানা গেছে।