গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে, পুড়েছে পুলিশের গাড়ি, জারি হয়েছে কারফিউ। একটি সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি কীভাবে এমন ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনায় রূপ নিতে পারে—এ প্রশ্ন এখন জাতীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রে।
তবে এই সহিংসতা কি আকস্মিক? নাকি পূর্বানুমেয় ছিল? যারা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা, সংঘাতের ইঙ্গিত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো বার্তাগুলো লক্ষ্য করেছেন, তাঁদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর খুব কঠিন নয়। গোপালগঞ্জে সহিংসতা হবে—এটা যেন "সবার জানা এক গোপন কথা" ছিল।
সুতরাং প্রশ্ন হলো—সরকার কী করছিল?
যদি জানত, তাহলে প্রস্তুতি কোথায়?
সরকার যদি আগে থেকেই জানত যে এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, তাহলে সেখানে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না? কেন সমাবেশ শুরুর আগে দাঙ্গাকারীরা “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে হামলা চালাতে পারল? কেন পুলিশ ও প্রশাসন তখন চুপচাপ আদালতের ভেতরে সরে গেল? এমনকি সমাবেশ শেষে যখন আবার হামলা হলো, তখনও কেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল—এ প্রশ্ন সাধারণ নাগরিকদের মনে আসাই স্বাভাবিক।
যদি সরকার জানত এবং কিছুই না করত, তাহলে তা একটি ইচ্ছাকৃত প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা, যা ভয়াবহভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আর যদি না জানত, তাহলে তা আরও ভয়াবহ!
একটি সম্ভাব্য সংঘাতময় পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিতে না পারা সরকারের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কাঠামোর একেবারে ভেঙে পড়ার চিত্র তুলে ধরে। রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে, তখন একজন পতিত, পলাতক প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ হবে—এটা না বুঝতে পারা যেন গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখ বন্ধ করে রাখার নামান্তর।
নিহতদের দায় কে নেবে?
রাজনৈতিক বিভাজন যতই গভীর হোক, প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলা চালানো কখনোই গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হতে পারে না। আর রাষ্ট্র যদি এই হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি নাগরিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না—এটাই সত্য।
এখন সরকারের সামনে দুটি পথ—এক, ঘটনা স্বীকার করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থকদের বিচারের আওতায় আনা। দুই, বরাবরের মতো “তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র” বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া।
জনগণ অপেক্ষা করছে—সরকার কোন পথ বেছে নেয়?
গোপালগঞ্জ এখন শুধু একটি জেলার নাম নয়, এটি একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন—রাষ্ট্র কি আর সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে? একটা জেলার উপর সরকার কী তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ?নাকি আরো বড় কোনো খেলার অংশ হিসেবে এই পরিকল্পিত উদাসীনতা?