এনসিপির আনুষ্ঠানিক যাত্রার মঞ্চে নবগঠিত দলের নেতারা-ফাইল ছবি
পহেলা বৈশাখে তাদের আয়োজিত সমাবেশে জনসাড়া না থাকাই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমানে দলটি যেন শুধুই মিডিয়ানির্ভর—অদূর ভবিষ্যতে হয়তো কেবল টকশোতেই টিকে থাকবে তারা।
তারা এখনো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন করেনি। ‘কিং’ যেহেতু মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছেন, তারা বোধহয় নির্ধারিত সময়সীমা বা প্রক্রিয়া নিয়ে খুব একটা ভাবিত নন। রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দায়বদ্ধতার অভাবই এখানে স্পষ্ট।
সম্প্রতি তারা আবার একটি নতুন ইস্যুতে হাজির—ঘোষণা দিয়েছে, মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না। ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার দাবি, মাঠ প্রশাসন বিএনপিপন্থী আচরণ করছে এবং তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসন নিশ্চুপ। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসন অপরিহার্য—এমন দাবিও তারা তুলেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রশাসন থেকে আওয়ামী দোসরদের ছেঁটে দিয়ে যখন জামাত-বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের ফসিল আমলাদের উচ্চপদে বসানো হয়, তখন সেই প্রশাসন থেকেই আবার নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করা—এটা একধরনের রাজনৈতিক কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়।
সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে যারা একদলীয় ধারা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করছে, তারাই আবার নিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায়—এ যেন ভণ্ডামির এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এনসিপিতে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ রয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে দু-একজন আমার খুব পছন্দেরও, কিন্তু দিকনির্দেশনার ঘাটতি ও দলের ভেতরের কিছু সদস্যের সীমাহীন আত্মবিশ্বাস—যা প্রায়ই অহংকারে রূপ নেয়—এই দলটিকে বাস্তব ক্ষমতার কাছাকাছিও পৌঁছাতে দেবে না। আদর্শ, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সমন্বয় না থাকলে কেবল উচ্চবাচ্চালতায় সাফল্য পাওয়া যায় না।
অনেকে মনে করেন, এমনকি ড. ইউনূস যদি নিজে দলটির হাল ধরেন, তবুও বর্তমান রাজনীতি ও ভোট সংস্কৃতির বাস্তবতায় এনসিপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বরং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি যতটা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন, এনসিপিও ততটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
রাজনীতি শুধু আবেগ দিয়ে নয়—এটা গড়ে ওঠে অভিজ্ঞতা, গ্রহণযোগ্যতা ও ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে। সে জায়গায় এনসিপি এখনও অনেকটাই অপূর্ণ।
(সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক আনিস আলমগীরের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)