বর্তমানের দেশে ১১টি জেলা বন্যা কবলিত। এর মধ্যে ফেনী জেলার তিনটি উপজেলা; ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার অবস্থা ভয়াবহ। পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, কয়েকদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। বন্যার্তদের উদ্ধারে ও তাদের হাতে ত্রাণ পৌছে দেওয়ার যে সাড়া লক্ষ করা গেছে তা অবিস্মরণীয়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে যে জাগরণ ঘটেছে তারই প্রতিফলন এতে সন্দেহ নেই। ফেনীর অনেকে বলেছেন, এতো পানি আমরা কখনোই দেখিনি, আবার মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর এমন অভাবনীয় ব্যাপারও আগে দেখিনি।
পানি যতো নেমে যাবে, বন্যার ক্ষত ততো প্রকাশিত হতে থাকবে। বন্যাকবলিত মানুষদের পুনর্বাসনের ধাপে ধাপে নানামুখী উদ্যোগ তখন লাগবে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। সেটা আগে মোকাবেলা করতে হবে। এর জন্য দরকার হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো দ্রুত সচল করা, প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপন করা। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে সেগুলো দ্রুত ঠিক করতে হবে। যাদের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের ঘর তৈরি করে দিতে হবে, যাদের ভেঙে গেছে সেগুলো মেরামত করতে হবে। পোল্ট্রী, মৎস্য, ডেইরি বা গরু মোটাতাজা করার খামারিরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। পুঁজির সাপোর্ট ছাড়া তাদের অনেকের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। তাদেরকে নতুন করে শুরু করার জন্য পুঁজি দিতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকদের বীজ, সার সরবরাহ করতে হবে যাতে ব্যাপক হারে আমনের চাষ করা যায়। এইসব কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার খাল-নালা, নদী খননের কাজে হাত দিতে হবে, বিগত ১৫ বছরে দখল হয়ে যাওয়া খাল, নালা এমনকি নদী উদ্ধার করতে হবে, যাতে করে বৃষ্টির বা উজান থেকে আসা পানি সহজে নেমে যেতে পারে।
অনেক কাজ, অনেক উদ্যোগ, অনেক টাকার দরকার। আশার কথা এই যে, এর মধ্যে সরকার এই পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করেছেন। ত্রাণ নিয়ে আমরা যে উদ্যোম দেখেছি, তাতে এই নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই। দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বিত পরিকল্পনা।
এইসব পরিকল্পনায় অবশ্যই উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বিদেশে গমনেচ্ছুদের বিষয়ও থাকতে হবে। যারা প্রবাসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন কিন্তু বন্যার কারণে যেতে পারেননি তাদের ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া। তাদেরকে বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। নতুন করে যারা বিদেশে যেতে চান তাদেরকে আর্থিক অণুদান দিতে হবে। পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিষয় যাতে থাকে নীতি-নির্ধারকদের কাছে আমরা আগাম দাবি জানিয়ে রাখছি।
প্রবাসীরা কেবল রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখছেন না, দেশের যে কোন রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও দেশের জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের পর এই বন্যায়ও সামাজিক গণমাধ্যমে তাদের সক্রিয় ভূমিকা আমরা দেখেছি। আমরা এও দেখেছি, যেসব এলাকায় প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি সেসব এলাকায় ত্রাণতৎপরতা ও উদ্ধার অভিযান ছিল অনেক বেশি সক্রিয়। এর কারণ হচ্ছে প্রবাসীরা কেবল তাদের পরিবার পরিজনকে উদ্ধার নয়, সবাইকে উদ্ধারে বিভিন্ন গ্রুপে সক্রিয় ছিল। পরিবার থেকে পাওয়া তথ্য, ছবি এবং উদ্ধারের আকুতি সামাজিক মাধ্যমে বারবার পোস্ট ও শেয়ার হওয়ার কারণে উদ্ধারকর্মীদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
প্রবাসীরা শারিরীকভাবে আমাদের থেকে দূরে থাকলেও মানসিকভাবে দেশের জনগণের সঙ্গে আছেন, বিদেশে তাদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি নিরাপদ অভিবাসনের বিষয়ও দ্বিতীয় স্বাধীনতার চেতনার আলোকে দেখা হবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Editor in Chief
Dulal Ahmed Chowdhury
News
Email: news@newsdiplomats.com
Advertisement
Email: ads@newsdiplomats.com
© The_News_Diplomats || Published from Canada.