Saturday, 14 June 2025
The News Diplomats
ডেস্ক রিপোর্ট :
Publish : 06:17 PM, 12 June 2025.
Digital Solutions Ltd

অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন একজন

ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৪০ জনের বেশি

ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৪০ জনের বেশি

বি জে মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের ওপর আছড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি।

Publish : 06:17 PM, 12 June 2025.
ডেস্ক রিপোর্ট :

যাত্রীরা ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও পর্তুগালের নাগরিক

ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ২৪২ জন আরোহী নিয়ে একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে আকাশে ওড়ার পরপরই একটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। ভারতের পুলিশ জানিয়েছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ২৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। একে এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে।
বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি ভারতীয় এয়ারলাইনস এয়ার ইন্ডিয়ার। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে আকাশে ওড়ে উড়োজাহাজটি। গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের দক্ষিণে গ্যাটউইক বিমানবন্দর। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উড়োজাহাজে ২৩০ জন যাত্রী, ১০ ক্রু ও দুজন পাইলট ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ভারতের ১৬৯ জন, যুক্তরাজ্যের ৫৩ জন, পর্তুগালের ৭ জন ও কানাডার ১ জন নাগরিক ছিলেন।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বলেছে, উড়োজাহাজটি ২৩ নম্বর রানওয়ে থেকে আকাশে উড়েছিল। কয়েক সেকেন্ড পর উড়োজাহাজ থেকে জরুরি অবস্থার সংকেত পাঠানো হয়। এরপর সংকেত বন্ধ হয়ে যায়। তখন উড়োজাহাজটি ৬২৫ ফুট উচ্চতায় উঠেছিল বলে জানিয়েছে উড়োজাহাজ চলাচলের তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি ওড়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে একটি আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে। এ সময় আগুন ও ধোঁয়ার বড় কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়। যে ভবনে গিয়ে উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে, সেটি বি জে মেডিকেল কলেজের একটি হোস্টেল। উড়োজাহাজের পেছনের অংশ ভবনটির ওপরে আটকে যায়। আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ।
গুজরাটের শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২৪০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁরা এখনো নিহতের সংখ্যা যাচাই–বাছাই করছেন। উড়োজাহাজের এক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, সব মরদেহ উদ্ধারের পর ডিএনএ পরীক্ষা শেষে এই দুর্ঘটনায় নিহতের মোট সংখ্যা জানানো হবে। ওই উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। আহমেদাবেদর পুলিশ কমিশনার জি এস মালিক সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রীর নিহত হওয়ার খবর রয়টার্সকে নিশ্চিত করেন।


এক যাত্রী জীবিত উদ্ধার
বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশকে (৪০) জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি উড়োজাহাজের জরুরি বহির্গমনের পাশে ‘১১–এ’ নম্বর আসনে ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রমেশ ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ড পর বিকট শব্দে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। চারপাশে মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এ সময় কেউ একজন তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১১টি শিশু ও দুটি নবজাতক ছিল। তাঁদের স্বজনেরা আহমেদাবাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন। এমনই একজন পুনম প্যাটেল। বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘আমার ভাবি লন্ডনে যাচ্ছিলেন। এক ঘণ্টার মধ্যে খবর পাই, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।’


‘আমার ছেলে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়েছে’
উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে দুপুরে খাওয়ার সময়। হোস্টেলটি আহমেদাবাদের মেঘানি অঞ্চলে একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। দুর্ঘটনার পর তোলা ছবিতে হোস্টেলের ক্যানটিনে টেবিলের ওপর খাবারের থালা ও গ্লাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
দুর্ঘটনার পর ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (এফএআইএমএ) রয়টার্সকে জানিয়েছে, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অন্তত দুজন নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ চিকিৎসকের স্বজন।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বি জে মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী খাবার খেতে ওই হোস্টেলে গিয়েছিলেন। তাঁর মা রামিলা এএনআইকে বলেন, ‘আমার ছেলে নিরাপদে আছে। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। (উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার সময় প্রাণে বাঁচতে) সে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়েছিল। এতে সে কিছুটা আহত হয়েছে।’

দুর্ঘটনার কারণ কী
বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। ৭৮৭–৮ মডেলের উড়োজাহাজটি ‘ড্রিমলাইনার’ নামেও পরিচিত। যাত্রী পরিবহনের জন্য সবচেয়ে আধুনিক উড়োজাহজাগুলোর মধ্যে এটি একটি। যুক্তরাজ্যের ক্রানফিল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক গ্রাহাম ব্রাইথওয়েট বলেন, বিধ্বস্ত হওয়া এই উড়োজাহাজ ১১ বছর আগে প্রথম আকাশে উড়েছিল। বিশ্বে ৭৮৭ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দরে ধস নেমেছে। আর উড়োজাহাজের ইঞ্জিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিই অ্যারোস্পেস বলেছে, উড়োজাহাজটির ককপিটের তথ্য বিশ্লেষণ করতে তারা একটি দল ভারতে পাঠাবে। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খুঁজতে ভারতের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাজ্যও।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। ধারণা করা হচ্ছে, আকাশে ওড়ার পরপরই সেটিতে বড় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফ্লাইট সেফটি বিশেষজ্ঞ মার্কো চ্যান এনডিটিভিকে বলেন, উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল ও আকাশ পরিষ্কার ছিল।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময়ের ভিডিও বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ব্রিকহাউস বলেন, ভিডিওতে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তে উড়োজাহাজের চাকা নিচে নামানো ছিল। অথচ এ সময় উড়োজাহাজ সাধারণত চাকা ওপরে তুলে নেয়। এটি দেখে মনে হবে, বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।


তবে আসলে উড়োজাহাজটিতে কী ঘটেছিল, তা জানতে বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন পড়বে। আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচল আইন অনুযায়ী, এ ঘটনার তদন্ত করবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এতে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড। কারণ, উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন যু্ক্তরাষ্ট্রে তৈরি। তদন্তে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ, রক্ষণাবেক্ষণের তথ্য, ব্ল্যাকবক্স ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হবে।
হিন্দুস্তান টাইমস–এর খবরে বলা হয়, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের একটি ব্ল্যাকবক্স ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। আরেক ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে এক কোটি করে রুপি দেবে টাটা
এয়ার ইন্ডিয়া টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর গ্রুপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারকে এক কোটি রুপি সহায়তা দেবে তারা। বৃহস্পতিরা সন্ধ্যায় টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস ও বিবিসি।

টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করবে তারা। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল পুনর্নির্মাণেও সহায়তা দেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত বিবৃতিতে চন্দ্রশেখরন বলেন, ‘এই শোকের মুহূর্তে কোনো শব্দই যথেষ্ট নয়। আমরা নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
১৯৩২ সালে জেআরডি টাটার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ভারতের প্রথম বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘টাটা এয়ার সার্ভিসেস’। সেটিরই পরে নাম হয় এয়ার ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৩ সালে ভারত সরকার এয়ারলাইনটি জাতীয়করণ করে। ২০২২ সালে এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি রুপিতে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা আবার টাটা গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।


‘এই ঘটনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না’
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে এক পোস্টে মোদি লিখেছেন, ‘আহমেদাবাদের ট্র্যাজেডি আমাদের স্তব্ধ ও শোকাহত করেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। তাঁরা বলেছেন, এই ভয়াবহ মর্মান্তিক ঘটনার শিকার বিভিন্ন দেশের মানুষের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের প্রতি বিশেষ প্রার্থনা ও গভীরতম সমবেদনা জানাচ্ছেন তাঁরা। এই ঘটনার পর যাঁরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন তাঁরা।
বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের যাত্রী ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ নাগরিকদের বহন করা লন্ডন অভিমুখী উড়োজাহাজ ভারতের আহমেদাবাদ শহরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর যেসব দৃশ্য সামনে আসছে, সেগুলো ভয়াবহ। উড়োজাহাজের যাত্রী ও তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছি।’
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় আরও শোক প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পিটার ফাইলা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।


ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত কী কারণে, বিশেষজ্ঞরা যা ভাবছেন
ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ জন আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে এক দশকের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফ্লাইট রাডারের তথ্য অনুযায়ী, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর কাছের একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমান পরিবহন খাতে স্বনামধন্য মডেলের এই উড়োজাহাজের এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এভিয়েশন খাতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, দুর্ঘটনার ভিডিওতে উড্ডয়নকালে (টেক–অফের সময়) উড়োজাহাজের ডানার পেছনের দিকের ফ্ল্যাপগুলো গুটিয়ে নেওয়া অবস্থায় দেখা গেছে। এটা এ দুর্ঘটনার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

ফ্ল্যাপ হলো উড়োজাহাজের ডানার পেছনের বর্ধিতাংশ। উড়োজাহাজ উড্ডয়নকালে ও অবতরণের সময় ফ্ল্যাপগুলো খুলে দেওয়া হয়।
কাতার এয়ারওয়েজের সাবেক পাইলট ক্যাপ্টেন মো. ইউনূস প্রথম আলোকে বলেন, যখনই ফ্ল্যাপগুলো উন্মুক্ত করা হয়, সেই সঙ্গে ডানার সামনের দিকের বর্ধিতাংশ, যা স্ল্যাট নামে পরিচিত, সেগুলো খুলে যায়। ফলে উড়োজাহাজের ডানার পরিসর বেড়ে যায়। এতে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিতে উড়োজাহাজ ওপরের দিকে উঠতে পারে। সাধারণত উড়োজাহাজ এক হাজার ফুট ওপরে ওঠার পর ফ্ল্যাপগুলো বন্ধ করা হয়। অপর দিকে টেক–অফের পর উড়োজাহাজ ৫০ ফুট ওপরে উঠলেই ল্যান্ডিং গিয়ার বা নিচের চাকা (আন্ডারক্যারিজ) গুটিয়ে নেওয়া হয়।
বিবিসির যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি নিচের দিকে নামছিল এবং একটি ভবনের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।


এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে টমাস বিবিসিকে বলেন, ‘আমি যখন এটা দেখছিলাম, তখনো উড়োজাহাজের নিচের চাকা খোলা ছিল আর ফ্ল্যাপগুলো গুটানো ছিল।’ জিওফ্রে টমাস আরও বলেন, এর অর্থ ফ্ল্যাপগুলো ডানার সঙ্গে একই রেখায় অবস্থান করছিল, যেটা উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পর এত দ্রুত এমন করাটা খুবই অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘সাধারণত উড্ডয়নের ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে নিচের চাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফ্ল্যাপগুলো গুটিয়ে নেওয়া হয়।’
আরেকজন বিশেষজ্ঞ টেরি টোজার বিবিসিকে বলেন, ‘ভিডিও দেখে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা কঠিন। তবে মনে হচ্ছে না ফ্ল্যাপগুলো বাইরে বেরোনো অবস্থায় ছিল এবং সেটা হলে তা একটি উড়োজাহাজ সঠিকভাবে উড্ডয়ন সম্পন্ন না করার ব্যাখ্যা হতে পারে।’
সাবেক পাইলট ও বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মার্কো চ্যান বিবিসিকে বলেন, ‘যদি ফ্ল্যাপগুলো সঠিকভাবে না রাখা হয়, তাহলে সেটা সম্ভাব্য মানুষের ভুলের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু ভিডিওর রেজ্যুলেশন এতটাই কম যে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন মো. ইউনূস (কাতার এয়ারওয়েজ ও বাংলাদেশ বিমানের সাবেক বৈমানিক) প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘উড়োজাহাজটি যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করার আগে ফুল লোড ছিল। অর্থাৎ ২৪২ জন আরোহী, তাঁদের মালামাল ছাড়াও অন্তত ৬০ টন জ্বালানি তেল ছিল। এ রকম অবস্থায় উড়োজাহাজটি টেক–অফের সময় ডানার ফ্ল্যাপগুলো বন্ধ থাকলে প্লেনটি উড়ে বেশি দূর যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।’
তিনি বলেন, তাঁরা খোঁজখবর করে যতটুকু জানতে পেরেছেন, ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন একজন অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন, যিনি ইনস্ট্রাক্টর। তবে কো–পাইলট অনেকটাই নবিশ বৈমানিক ছিলেন। তাই এ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কতটা ‘হিউম্যান এরর’ (মানুষের ত্রুটি) আর কতটা যান্ত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তা পরবর্তী সময়ে তদন্ত সাপেক্ষে স্পষ্ট হওয়া যাবে।

ASIA/SOUTH ASIA বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম ইউনূস–তারেক বৈঠকে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা `সন্তুষ্ট’ শিরোনাম ইরান-ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা শিরোনাম ইরানের সেনাপ্রধান বাঘেরিসহ বহু শীর্ষ সামরিক-পারমাণবিক কর্মকর্তা নিহত শিরোনাম সংস্কার ও বিচারে অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে শিরোনাম ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৪০ জনের বেশি শিরোনাম সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য ইউনূস-তারেক বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ