যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। কিংস ফাউন্ডেশনের হারমনি এওয়ার্ড নিতে চার দিনের সফরে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছেন তিনি।
সফরের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চার দিনের সরকারী সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন তিনি। সফরকালে বাকিংহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা রাজা চার্লসের হাত থেকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপেও অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁর এই সফরে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, দুদক চেয়ারম্যান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, এসডিজি সমন্বয়ক, বিশেষ সহকারী, প্রেস সচিবসহ মিডিয়া সেলের একাধিক সদস্যসহ বিরাট বহর। কিন্ত প্রথম দিন লন্ডনে নেমেই ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের সূত্রমতে ড. ইউনূসকে বিমান বন্দরে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ হাই কমিশন ছাড়া ব্রিটিশ সরকার বা রাজার কোন প্রতিনিধি বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। প্রথা হচ্ছে কোন রাষ্ট্রীয় অতিথি আসলে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সেই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি কেউ উপস্থিত থাকেন। কিন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রিসিভ করার জন্য কেউ ছিলেন না।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকাল সোয়া ৪টায় লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন ব্রিটিশ এমপির বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিটিশ বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বর্তমানে কানাড সফরে আছেন। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের কোনও সূচি এখনও ঠিক হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে অবস্থানকালে কিয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যে ফিরে এলে এবং তার শিডিউল (সূচি) পাওয়া গেলে বৈঠক হতে পারে বলেও জানান প্রেস সচিব। অথচ সফরের আগে দেশে থাকলে বলা হয়েছিলো, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বেঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস সচিবের এই ব্রিফিংয়ের পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (১০ জুন) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি ডাউনিং স্ট্রিটে শিশু কিং, এলসি ডট স্ট্যানকম্ব এবং অ্যালিস আগিয়ার-এর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন, যেখানে তিনি সাউথপোর্টে একটি স্মৃতি উদ্যানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই প্রকল্পের জন্য সরকারি অর্থায়নের ঘোষণা দেন। তিনি নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন, যেখানে তারা ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ন্যাটোর মিত্রদের জন্য সম্মিলিত প্রতিরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি সাইজওয়েল সি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও লন্ডন টেক উইক ২০২৫-এ এনভিআইডিআইএ-এর সিইও-এর সঙ্গে ইভেন্টটির উদ্বোধন করে বক্তব্য দেন। আগামী ১৪ জুন তার কানাডা যাওয়ার কথা রয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক এর চিঠির বিষয়টি ব্রিটিশ গণমাধ্যম সহ দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। কিন্ত প্রেস সচিব তখন টিউলিপ সিদ্দিক এর চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করেন। কোন চিঠি পাননি বলে জানান।
কিন্ত গতকাল সাংবাদিকদদের কাছে সেই চিঠি হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি চিঠি পেয়েছি।’চিঠির জবাব দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘চিঠির বিষয়টি আইনি এবং এটি আইনিভাবে সমাধান করা হবে।’
জানা গেছে, বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার যে সূচি রয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত যে সব সৌজন্য সাক্ষাত ও সভা করেছেন এবং করবেন. এর একটিও সরকারি পর্যায়ে কোন বৈঠক নয়। প্রেস সচিবের একের পর এক এমন বক্তব্যে দেশ-বিদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
এর আগে, চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ১০ জুন লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ওঠেন তিনি। হোটেল মুখেই তাকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ডরচেস্টার হোটেলে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইউরোপীয় বিমান সংস্থা এয়ারবাসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াউটার ভ্যান ওয়র্শ এবং দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কটল্যান্ডভিত্তিক মেনজিস এভিয়েশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস ওয়াইলির পূর্বনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর বেলা দুইটায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক, আপসানা বেগমসহ অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে বিকেলে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল শার্লি আয়োরকর বচওয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন।
যু্ক্তরাজ্য সফরকালে ড. ইউনূস ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত পূর্বনির্ধারিত রয়েছে।