রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা: হাসনাত আবদুল্লাহ
এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।
আজ বুধবার বিকেলে ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনার বিষয়বস্তু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে প্রেস উইং।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণ–ঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে বলে প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নেতারা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) তানিয়া রব, ১২-দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের মিজানুর রহমান।
এরআগে মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় চারটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দৃশ্যমান করার কথা বলেছেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু ঐক্যের কথা বলেননি, উনি বলেছেন আপনাদের মধ্যে ঐক্য আছে এটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। আপনারা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রশ্ন হোক, গঠনমূলক কোনো কর্মসূচির প্রসঙ্গে হোক। যদি একসাথে থাকেন এটা যদি মানুষ দেখে মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব আসবে, অনেক বেশি মানুষ খুশি হবে এটা দেখে।’সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা জানান, এই বৈঠকে মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাণহাণী নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
অধ্যাপক ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা: হাসনাত আবদুল্লাহ
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগ চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ বুধবার দুপুরে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। অভ্যুত্থানের পর আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের মতো, আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থাও আগের মতো। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (উপদেষ্টা) আছে, চেনেন ওনাকে? উনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় আসছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই।’
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ‘কিছু বোঝেন না’ বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক হাসনাত। তিনি বলেন, ‘উনার একমাত্র যোগ্যতা উনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিল এবং ড. মুহম্মদ ইউনূসের কাছের মানুষ। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লইয়া আমরা কী করিব? এবং দুঃখজনক বিষয়, উনি নিজে চিকিৎসা করাইতে সিঙ্গাপুর যায়। আমরা বললে বিড়াল বেজার হয়। উনাকে নিয়ে একবার কথা বলছিলাম, এরপর উনার আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না। জনগণ উনাকে যে বেতন দিছে, সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমানে বিধ্বস্তের ফলে হওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় শোক জানিয়ে নতুন দল এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা গতকাল দেখেছেন, লাশের ওপর দিয়ে এই আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ আবার রাজনীতিতে আসতে চেষ্টা করছে। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শোকাহত। যারা বাংলাদেশকে ধারণ করি, সবাই শোকাহত। কিন্তু যদি আওয়ামী লীগ আবার উত্থানের চেষ্টা করে আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই আওয়ামী লীগকে নাই করে দেব। যদিও আমরা আওয়ামী লীগের চাপটার ক্লোজ করেছি, এই আওয়ামী লীগ আবারও ফিরে আসার চেষ্টা করলে এখন আমরা তাদের নাই করে দেব। এ জন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’