চারটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফটোসেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ৪ দল
দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও শক্ত অবস্থান নিতে বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা এই অভিমত জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় চারটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে রাত ১১টার পর সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দৃশ্যমান করার কথা বলেছেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু ঐক্যের কথা বলেননি, উনি বলেছেন আপনাদের মধ্যে ঐক্য আছে এটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। আপনারা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রশ্ন হোক, গঠনমূলক কোনো কর্মসূচির প্রসঙ্গে হোক। যদি একসাথে থাকেন এটা যদি মানুষ দেখে মানুষের মধ্যে স্বস্তির ভাব আসবে, অনেক বেশি মানুষ খুশি হবে এটা দেখে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘প্রথমটা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যেন আরও শক্ত অবস্থান নিই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের কিছুটা ঘাটতি আছে সে কথা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে আমাদের সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য আছে বলে নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এর উদাহরণ হিসেবে তাঁরা যখনই প্রধান উপদেষ্টা ডাক দেন, তখনই তাঁরা এসে হাজির হন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নিয়মিত গিয়ে কথা বলছেন সে সব বিষয় উল্লেখ করেছেন তাঁরা।
তাছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে কোনো হতাশা নেই বলেও উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে, ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে তাদের মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা, মতবিরোধ নেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন, রাজনীতির মাঠে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে কথা বলতে পারি। এর মানে এটা না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তারা আমাদের রাজনৈতিক সহযোগী, রাজনৈতিক মাঠে মাঝে মধ্যে এ রকম কিছু কথা বলা হবে। এর থেকে কোনোভাবে ধারণা করা উচিত না, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরেছে।’
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
৯ ঘণ্টা আটকে থাকার পর পুলিশি পাহারায় মাইলস্টোন থেকে বেরোলেন দুই উপদেষ্টা
এর আগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে দিনভর আটকে থাকার পর সন্ধ্যায় পুলিশের পাহারায় উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হয়েছেন দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আটকে ছিলেন তাঁরা। বাইরে চলছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ।
বিকেলে একবার কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে এসেছিলেন দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব। এরপর তাঁরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন ৭-এর দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নেন। তাঁদের গাড়িগুলো কলেজ ক্যাম্পাসে রাখা হয়। তখন থেকে একাডেমিক ভবন ৭–এর পাশাপাশি ভবন ৫–এর সামনেও ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ক্যাম্পাসে সক্রিয় দেখা যায়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নিচে নেমে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সদস্যরা। সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে তাঁরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। কলেজের প্রধান ফটক থেকে বের হয়ে তাঁদের গাড়িবহর দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ডিপো দিয়ে পার হয়ে যায়।
গতকাল সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই শিশু এবং তারা মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। গতকাল উদ্ধার তৎপরতা চলার সময় মাইলস্টোনের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।