সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা: আহত ৩৫ জনকে নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে
সচিবালয়ে গেইট ভেঙে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা, আহত ৭৫ জন ঢাকা মেডিকেলে # যু্দ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ # মাইনস্টোনে অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব # শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা # শিক্ষা সচিব প্রত্যাহার # সচিবালয়ে অসংখ্য যানবাহন ভাঙচুর # বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে আহত ৭৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ সময় লাঠিপেটা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলও ছোড়া হয়েছে। প্রায় ঘন্টাব্যাপি সচিবালয়ের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল।
এর আগে বিকেল পৌনে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ফটক খুলে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর সচিবালয়ের ভেতর পার্কিং অবস্থায় থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গাড়ি ভাঙচুরের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের করে দেন। এর পর সচিবালয়ের সামনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’—এমন স্লোগান দেন।
অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব, বিক্ষোভ চলছে
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দিয়াবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। সেখান থেকে তাঁদের গাড়ি ঘুরিয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়েছে। দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব কলেজের ভেতরে একটি ভবনে গিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার কিছু আগে কলেজ থেকে বের হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় কলেজের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়নি। উপদেষ্টাদের গাড়ি দিয়াবাড়ি মোড়ে গেলে বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা পৌনে একটার দিকে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা প্রতিটি দাবি পূরণ করব। বিশ্বাস রাখেন।’ তবে উপদেষ্টার বক্তব্যের পরও বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টারা আবার কলেজের ভেতরে ঢুকে যান। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ সময় অবস্থান করতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সি আর আবরার, প্রেস সচিব শফিকুল আলম কলেজ পরিদর্শনে আসেন। সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুই উপদেষ্টা পরে কলেজের ৫ নম্বর ভবনের নিচতলায় কনফারেন্স কক্ষে যান। তাঁদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষকেরাও ছিলেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঁচ থেকে সাতজন প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলে। এ সময় বাইরে শত শত শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বেলা পৌনে একটার দিকে উপদেষ্টারা কনফারেন্স কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। অভিভাবক হিসেবে ভালোবাসা জানাতে এসেছেন বলে জানান। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক।
শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এসব দাবি হলো, নিহত ব্যক্তিদের সঠিক নাম-পরিচয় প্রকাশ; আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা; শিক্ষার্থীদের প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ; বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও কেন্দ্র সংস্কার করে আরও মানবিক ও নিরাপদব্যবস্থা চালু, শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।
গতকাল সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব প্রত্যাহার
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবাইরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ৩১: আইএসপিআর
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
আইএসপিআর’র সবশেষ আপডেট: বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা ২২ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত; কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮, নিহত নেই; বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৪৬, নিহত ১০; ঢাকা মেডিকেলে আহত ৩, নিহত ১; সিএমএইচে (ঢাকা) আহত ২৮, নিহত ১৬; লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে (উত্তরা) আহত ১৩, নিহত ২; উত্তরা আধুনিক হসপিটালে আহত ৬০, নিহত ১; উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত ১, নিহত নেই; শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ১, নিহত নেই; ইউনাইটেড হাসপাতালে (ঢাকা) আহত ২, নিহত ১; কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত ৩, নিহত নেই। মোট আহত ১৬৫, নিহত ৩১ জন।
গতকাল (সোমবার, ২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার সঠিক তথ্য প্রকাশ এবং গভীর রাতে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী। বেলা তিনটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে মহাসড়কের দুই পাশে অসংখ্য যান আটকে আছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে নগরের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই অবরোধের ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
এ সময় বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন, শাহরিয়ার রুম্মান, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁদের অভিযোগ মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় এতগুলো শিশুর মৃত্যু ও দগ্ধ হওয়ার ঘটনার পর সরকারের যে ধরনের দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। তাঁরা বলেন, এত বড় দুর্ঘটনার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেনি। এরপর গভীর রাতে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি। এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।