আহত ১৭১ জনের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৭১ জন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে। আইএসপিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলটসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন।
এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল এ ঘটনায় ১৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য দেন। বাংলাদেশ সময় সোমবার বেলা ১টার পর স্কুল ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। পরে বিধ্বস্ত হয়।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মাইলস্টোনের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, আজ বিমানবাহিনীর একটি এফ–সেভেন বিজেআই ফাইটার এয়ারক্র্যাফট আনুমানিক একটার দিকে আমাদের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুল ভবনে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। এই দোতলা ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সাথে ছিল প্রিন্সিপালের (অধ্যক্ষের) অফিস মিটিং রুম। একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং যখন হয়, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় যে জায়গায় টিচার্স রুমের সাথে যে ল্যান্ডিং হয় ,আঘাত করে, ওই জায়গায় বাচ্চাকাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সাথে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিল।’
ফায়ার ফার্ভিস আনুমানিক বেলা ১টা ৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পায় জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘দ্রুত আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের মোট ৯টা ইউনিট এখানে কার্যক্রম করেছে। বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ অবস্থায় আছে এবং আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি’
হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমরা ১৯ জনের ডেড বডি উদ্ধার করেছি। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে আছে। এখানে সেনাবাহিনী এবং আমাদের ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অন্যান্য সবাই মিলে আমাদের সহযোগিতা করেছে, আমাদের উদ্ধারকাজ চলমান আছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলে আমরা টোটাল ক্ষয়ক্ষতির ফিগারটা আপনাদেরকে বলতে পারব।’ মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘যারা নিহত, এখনো তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি, সময় লাগবে। আমাদের ধারণা, অধিকাংশই শিশু।’
বিধ্বস্ত হওয়া এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটিতে
যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল: আইএসপিআর
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। সেটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।
আজ বেলা ১টা ৮ মিনিটের দিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় বিমানের পাইলটসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৪ জন। আইএসপিআর ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে হতাহতের এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাদের অধিকাংশই শিশু এবং তারা মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী।
আইএসপিআর বলেছে, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’
এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনীর প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনীর প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বিমানবাহিনী ইতিমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জরুরি যোগাযোগের নম্বর দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—
*মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড 01769024202
*সিএমএইচ বার্ন ইউনিট 01769016019
*সিএমএইচ ইমার্জেন্সি 01769013311
*মাইলস্টোন স্কুল Admin Officer 01814774132
*উপাধ্যক্ষ 01771111766
*ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি নাম্বার 999 বাংলাদেশ পুলিশের ইমার্জেন্সি সেল থেকে বার্ন ইউনিটগুলোর সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেবে।
ক্লাস শেষে বের হয়ে আসছিল কাব্য, হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণ
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাব্য। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে কাব্যর ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছিল। বের হয়ে আসছিল সে। এ সময় বিকট শব্দে হয় বিস্ফোরণ।
কাব্য জানায়, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। যে ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় সেটি দোতলা ছিল। ক্যানটিনের পাশেই ওই ভবনটি। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হতো। বেলা একটার দিকে তাদের ছুটি হয়ে যায়। তবে তখনো কিছু শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করছিল।
কাব্য আরও জানায়, আহত অনেককে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের জন্য প্রচুর রক্ত লাগবে। রক্ত দিতে আগ্রহীদের অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছে।
উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। পরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ২৮ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, দগ্ধদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।
মেয়ে বলে, মা, আমার সব জ্বলে’
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর কক্ষের মেঝেতে মেয়েকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। তাঁর ১১ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাত ইউশা বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুড়ে গেছে।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, পিঠও পুড়ে গেছে। আমার মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে “মা, আমার সব জ্বলে।”’
এই মা জানান, তাঁর দুই ছেলে–মেয়ে। মেয়ে মাইলস্টোনে পড়ে।
আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছে
এদিকে ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে বিলাপ করতে থাকা নাসিমা বেগমকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন আত্মীয়-স্বজনেরা। তাঁর ছেলে রবিউল হাসান রোহান সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় রবিউলের শরীর পুড়ে গেছে।
নাসিমা বেগম বলছিলেন, 'এমন দশা ক্যামনে হইছে রে। কত মায়ের বুক খালি হইছে রে। আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছে রে।’রোহানের বাবা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের পুরো শরীর পুড়ে গেছে। তাঁর ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় কাল রাষ্ট্রীয় শোক
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রীয় শোক উপলক্ষে আগামীকাল দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। আমি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ প্রদান করছি।’