বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের একটি পারমানবিক স্থাপনা
হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা সম্পন্ন করেছে। স্থাপনাগুলো হলো ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান। তবে ইরান দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তারা বড় ধরণের কোনো ক্ষতির মুখে পড়েনি। ইরানি কর্তৃপক্ষ বোমা হামলার আগেই ওই স্থাপনাগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানে চালানো এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে।
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে—খুবই সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’ খবর বিবিসির।
ট্রাম্প একটি ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স একাউন্ট থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা নাই হয়ে গেছে। আল–জাজিরা।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘এটি (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও পুরো বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’ ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আজ ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় রাত ১০টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বাংলাদেশের সময় ১০ ঘণ্টা এগিয়ে। এ হিসেবে বাংলাদেশ সময় আজ রোববার সকাল ৮টায় ট্রাম্প এ ভাষণ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ইরান তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি আজ সরাসরি টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে জানান, ইরান ইতিমধ্যেই তিনটি পরমাণু স্থাপনাকে “আগেই” খালি করে ফেলেছে। খবর বিবিসি
তিনি বলেন, “ট্রাম্প যেটাই বলুন না কেন, আমরা বড় ধরনের কোনো ক্ষতির মুখে পড়িনি, কারণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।”
এমন মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরান হয়তো সম্ভাব্য হামলা বা হুমকির ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক ছিল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে তারা একদিকে যেমন ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের কৌশলগত সচেতনতা ও প্রতিরক্ষা দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারছে।
তবে এখনো পরিষ্কার নয়, ঠিক কবে নাগাদ এসব স্থাপনা খালি করা হয় এবং সেগুলোর উপাদান কোথায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রকে আগের সতর্কবার্তা আবারও মনে করিয়ে দিলেন খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া তাঁর এক বক্তব্য আবারও শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়ায়, তাহলে তা হবে তাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য। ওই ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা ইরানের যে কোনো ক্ষতির চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে।’
ফোরদোর একটি অংশে হামলা হয়েছে: ইরানি কর্মকর্তা
ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়েছে, কোম প্রদেশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার একটি অংশে বিমান হামলা হয়েছে। কোমের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সদর দপ্তরের মুখপাত্র মোরতেজা হেইদারিকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কয়েক ঘণ্টা আগে, শত্রুর লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে কোমের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার পর ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার একটি অংশ শত্রু বিমান হামলার শিকার হয়েছে। আল-জাজিরা।
ইসরায়েল জুড়ে কঠোর সতর্কতা
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, সামরিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশজুড়ে জনসাধারণের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়েছে। এটি ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে নেওয়া পদক্ষেপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের উড়াল
এর আগে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরির ঘাঁটি থেকে একাধিক বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান উড্ডয়ন করে। নিউইয়র্ক টাইমস ও আল-জাজিরার খবরে এই উড্ডয়নের কথা বলা হলেও, বিমানগুলোর গন্তব্য নিশ্চিত করতে পারেনি। বিমানগুলো মিজৌরি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে হাওয়াইয়ে জ্বালানি নেওয়ার পরপর যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, গুয়াম হয়ে বিমানগুলোর গন্তব্য হতে পারে ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া।
আল-জাজিরা বলছে, বি-২ বিমানগুলোর এই উড্ডয়ন ইঙ্গিত দেয়— যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
এই বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলোই ৩০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কেজি) ওজনের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা বহনে সক্ষম—যা ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। এই ধরনের অস্ত্রের উদ্দেশ্যই হলো গভীরভাবে সুরক্ষিত স্থাপনায় প্রবেশ করে ধ্বংস সাধন করা।