বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, সাবেক ডিসি নুরুল হক ও এসপি মোজাহিদুল ইসলাম
বিএনপি’র আলোচিত পার্লামেন্টারিয়ান হারুনুর রশীদ এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজ মেধা ও বাগ্মীতা দিয়ে একাদশ সংসদের প্রায় গোটা মেয়াদ সংসদ মাতিয়ে রেখেছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে চাপাইনবাবগঞ্জ -৩ আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আব্দুল ওয়াদুদ এবং জায়ামাতে ইসলামীর নুরুল ইসলাম বুলবুল। নির্বাচনটি ছিল খুবই প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ। অথচ একাদশ সংসদ নির্বাচনে একমাত্র চাপাই নবাবগঞ্জ ছাড়া সারাদেশে আগের রাতে ব্যালেট সিল মেরে বক্সে ভরে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
এই নির্বাচনে আব্দুল ওয়াদুদ নৌকা প্রতিকে ভোট পান ৮৫,৯৩৮। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হারুনুর রশীদ ধানের শীষ প্রতিকে ১,৩৩,৬৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নুরুল ইসলাম বুলবুল দাড়িপাল্লা প্রতিকে ৫৯,৫১৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল জিয়াউর রহমান, নৌকা ১,৩৯,৯৫২ এবং আমিনুল ইসলাম, ধানের শীষ ১,৭৫,৪৬৬
জেলার তিনটি আসনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন ছিল বেশি আলোচিত। এ আসনের এমপি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। তিনি হারিয়েছিলেন বিএনপি নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়াকে। ডা সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের নৌকা ১,৭৯,৪৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান মিয়া ধানের শীষ প্রতিকে পান ১,৬৩,৬৮২ ভোট।
২০১৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, ঐ জেলার সব কটি আসনের নির্বাচনই ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্ধতাপূর্ণ। তাছাড়া, আর যেসব বিষয় আলোচিত হয়েছিল তা হলো, সারা দেশে বিএনপি মোট যে ৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল তার ২টি-ই ছিল ঐ জেলায়। সারা দেশের মধ্যে ঐ জেলাতেই জামায়াত প্রার্থী স্বাভাবিকভাবে নির্বচনী প্রচারণা করতে পেরেছিলেন এবং তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দিনের ভোট রাতে হবার অভিযোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীগণ পরাজিত হয়েছিলেন সেখান থেকে পাওয়া যায়নি। এর সকল কৃতিত্ব প্রশাসনের। তবে শিবগঞ্জ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহজাহানকে হারিয়ে র্যাব প্রধানের প্রার্থী ডা শিমুলকে জেতানোর জন্য ২/৩টি ইউনিয়নের কিছু কেন্দ্রে রাতে ব্যালটে সীল মারা হয়ে থাকতে পারে মর্মে পরবর্তীতে কিছু বিচ্ছিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যার সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষ।
চাপাইনবাবগঞ্জের একাধিক বিশিষ্ট জন জোর দিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে চাঁপাইবাসী গর্ববোধ করে। আর এই দৃষ্টান্তমূলক সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কৃতিত্ব যাদের দিতে হবে তারা হলেন, তৎকালীন ডিসি এজেডএম নূরুল হক ও এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম। তারা দুই জনই বিশতম বিসিএস এর সদস্য এবং তাদের মধ্যে ভালো সমন্বয় ছিল বলে তাদের দ্বারা ভালো কিছু সম্ভব হয়েছিল। একজন বিএনপি নেতা বলেন, এই দুইজন কর্মকর্তাকে অন্য কোনভাবে পুরস্কৃত না করা হলেও, তাদের আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে ইলেকশন কমিশনে পদায়ন দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অবদান রাখতে পারবেন।