বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করার বিষয়ে কর্মচারীদের দাবি আগামীকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তুলে ধরবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবেরা। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন কর্মসূচি আগামীকাল এক দিনের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার দুপুরের পর সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদসহ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে আন্দোলনকারী কর্মচারী নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভূমিসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনিসহ কয়েকজন সচিবকে আজ সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব দায়িত্ব দেন। সে অনুযায়ী আজ তাঁরা আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছেন। তাঁদের কথা আগামীকাল সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে তাঁরা জানাবেন। এ অবস্থায় কর্মচারীরা আগামীকাল কোনো কর্মসূচি করবেন না।
আন্দোলনকারীদের একজন নেতা বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মুহা. নুরুল ইসলাম এ সময় জানান, তাঁরা আগামীকাল কোনো কর্মসূচি পালন করবেন না। এ সময় আন্দোলনকারী নেতাদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন বাদিউল কবির, নজরুল ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর থেকে এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
আন্দোলনের মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আজসহ টানা চার দিন সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দপ্তর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কর্মচারীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আজ সচিবালয়ে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া বিজিবি, র্যাবও মোতায়েন করা হয়। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেই আজ সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। বেলা একটা পর্যন্ত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কর্মচারীদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর বেলা একটার পর সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে অনুমোদন দেওয়া হয়।
সচিবালয়ের সামনে ‘জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতার’ গণসমাবেশ
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগের বিরুদ্ধে থাকা আমলাদের অপসারণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে গণসমাবেশ করেছে ‘জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর সচিবালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে আবদুল গণি সড়কে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে এই গণসমাবেশ শুরু হয়।
গণসমাবেশ ‘আমলাদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সচিবদের জমিদারি, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, সচিবালয়ে হবে না’, ‘আওয়ামী লীগের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘শেখ হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। গণসমাবেশ সংস্কারবিরোধী সচিব ও আমলাদের অপসারণ এবং ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করার দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের নেতৃত্বে এই গণসমাবেশে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। গণসমাবেশে আরিফ সোহেল বলেন, ‘সচিবালয়ে যেসব সচিব ও আমলা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে এবং সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে, আমরা তাদের অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। চাকরিবিধি নিয়ে আন্দোলন করা সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরিফ সোহেল আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের অপসারণ করতে হবে। তাঁরা তাদের বিচার ও অপসারণের দাবি জানাচ্ছেন।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের মতো সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করছেন কর্মচারীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এই বিক্ষোভ হয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা করতে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন ‘জুলাই মঞ্চের’ আহ্বায়ক আরিফ তালুকদার, মুখপাত্র সাকিব হোসেনসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।