Saturday, 14 June 2025
The News Diplomats
ডয়চে ভেলে ও নিজস্ব প্রতিবেদক :
Publish : 12:31 AM, 27 May 2025.
Digital Solutions Ltd

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন কেন আপত্তি?

সচিবালয়ের নিরাপত্তায় সোয়াট–বিজিবি, বড় বিক্ষোভের আশঙ্কা

সচিবালয়ের নিরাপত্তায় সোয়াট–বিজিবি, বড় বিক্ষোভের আশঙ্কা

সচিবালয়ের সামনে বিজিবি মোতায়েন

Publish : 12:31 AM, 27 May 2025.
ডয়চে ভেলে ও নিজস্ব প্রতিবেদক :

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখা হয়নি।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে এর বিরোধিতা করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হওয়া অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত শনিবার সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা।
তাদের আন্দোলনকে পাত্তা না দিয়ে ওই দিন রাতে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে কর্মচারীরা সোমবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দেখা যায়, সচিবালয়ের প্রধান ফটকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সচিবালয়ের সামনে বিজিবি মোতায়েন দেখা গেছে। সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছেন না।
অবশ্য গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আজ সচিবালয়ে সব ধরনের দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এমন অবস্থায় আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাংবাদিকদেরও সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে সিদ্ধান্ত হবে।
দাবি আদায়ে গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আজ আবার বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে একই ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য সচিবালয়ের বাইরে সারা দেশের সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। এখন থেকে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন মিলে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ নামে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।


কেন এই সংশোধন
গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পেশাগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। বারবার সতর্ক করেও তাদের কর্মসূচি থেকে সরাতে পারেনি সরকার। কর্মসূচি পালনের সময় সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তর ঘেরাও, হট্টগোল তৈরি ও নজিরবিহীন শোডাউন করেন তারা। এসব ‘অপরাধের' জন্য বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে সরকার।
অন্যদিকে সরকার পতনের পর পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ১৮০ জন এখনো কাজে যোগ দেননি। অনেকে অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিভাগীয় মামলা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় বলে সহজেই তাদের চাকরিচ্যুতির পথ করেছে সরকার। যারা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চায় সরকার।
সাধারণত বিভাগীয় মামলা দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক হলেও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে চান কিনা, তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর ব্যক্তিগত শুনানি নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং দ্বিতীয় দফায় অভিযোগকারীকে নোটিশ দেন। দ্বিতীয় দফার নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর নিয়োগকারী মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)-র সুপারিশ নেওয়া হয়। তারপর রাষ্ট্রপতির সম্পতি নিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে দেড়-দুই বছর বা তারও বেশি সময় লেগে যায়।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারেন। আপিলে সন্তোষজনক রায় না পেলে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা।


অন্যদিকে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, কারো চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা পুরো অবসর সুবিধা পান। আর বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালে চাকরিকাল অনুযায়ী পেনশন সুবিধা পান তিনি। তবে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণ করলে কোনো অবসর সুবিধা পাওয়া যায় না। বিভাগীয় মামলা না দিয়ে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হলে অবসর সুবিধা পাবেন কি পাবেন না বা কীভাবে তা দেওয়া হবে সে বিষয়ে অধ্যাদেশে কিছু বলা হয়নি।
কোথায় আপত্তি?
আইন সংশোধন করে চার ধরনের অপরাধের জন্য সরকারি কর্মচারীদের নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ; চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্তের দণ্ড দেওয়ার সুযোগ করেছে সরকার।
সরকারি কর্মচারীরা যদি এমন কাজ করেন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; ছুটি না নিয়ে বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে কাজে অনুপস্থিত বা বিরত থাকলে; কোনো কর্মচারীকে তার কাজ থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করার উসকানি বা প্ররোচিত করলে এবং সরকারি কর্মচারীকে কাজে উপস্থিত হতে বা কাজ করতে বাধা দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
নতুন করে আইনে এসব বিষয় যুক্ত করায় কেন সরকারি কর্মচারীরা আপত্তি তুলেছেন- তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সাবেক একজন অতিরিক্ত সচিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ আইন করা হয়েছিল। ওই আইন থেকে যখন কোনো বিধানেএখন আইনে যুক্ত করা হয়, তখন আপত্তি ওঠা স্বাভাবিক। আন্দোলন-সংগ্রহ দমনে অন্তর্বর্তী সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে কাউকে সাজা দিতে গেলে অনেক সময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয় না। বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে যখন কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় তখন অভিযুক্ত কথা বলার সুযোগ পান। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ কতটা পাবেন, সেই প্রশ্ন রয়েছে।'
কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি করতে পারে বা আন্দোলনরদের এ বিষয়ে ব্রিফ করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাতিল হওয়া ১৯৭৯ সালের বিশেষ আইনের মাধ্যমে দলবাজ নেতা ও রাজনৈতিক সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তখনও নিরীহ কর্মকর্তারা ওই আইনের আওতায় সাজা পেয়েছেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে কর্মচারীরা এখন ভীত ও সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।''
দায় স্বরাষ্ট্র সচিবের?

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯ এর কিছু ধারা যুক্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ওই অধ্যাদেশের চারটি ধারা যোগ করে খসড়া করা হয়।
স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন বলে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মচারী নেতারাও দাবি করেছেন। এ বিষয়ে একজন কর্মচারী নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পরপর তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তিন সচিবই তাদের জানান, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মচারী নেতা বলেন, এ বিষয়ে তারা স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও দেখা করতে পারনেনি। পরে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষাতের পর তিনি আশ্বাস্ত করেছিলেন, এ ধরনের কোনো আইন করবেন না তারা।
যেভাবে নিষ্পত্তি হবে অভিযোগ
নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ায় বিভাগীয় মামলা না দিয়ে যে কোনো সরকারি কর্মচারীর অপরাধের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দিয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগ গঠন করতে পারবেন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে অভিযুক্ত করে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হবে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে শুনানি করতে চান কি না, নোটিশে তাও জানতে চাওয়া হবে।
এসব প্রক্রিয়ার পর অভিযোগ গঠনকারী চাইলে দণ্ড দিতে পারবেন। কেউ নোটিশের জবাব না দিলে অভিযুক্তের বাসস্থানের দৃষ্টিগোচর স্থানে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া কমপক্ষে দুইটি দৈনিক পত্রিকায় নোটিশ প্রকাশ বা অভিযুক্তের ই-মেইলে পাঠানো হলে নোটিশ যথাযথভাবে জারি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। এক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করতে পারবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি যা উপযুক্ত মনে করবেন, সেই আদেশ দিতে পারবেন। এবং এই আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

-ডয়চে ভেলে

BANGLADESH বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম ইউনূস–তারেক বৈঠকে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা `সন্তুষ্ট’ শিরোনাম ইরান-ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা শিরোনাম ইরানের সেনাপ্রধান বাঘেরিসহ বহু শীর্ষ সামরিক-পারমাণবিক কর্মকর্তা নিহত শিরোনাম সংস্কার ও বিচারে অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে শিরোনাম ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৪০ জনের বেশি শিরোনাম সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য ইউনূস-তারেক বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ