আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক আইনজীবীদের কাছে দাবি করেছেন, কারাগার থেকে তাঁর দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে। আইনজীবীর উদ্দেশে পলক বলেন, ‘আগামী শীতকাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে কি না, জানি না। কিন্তু আমার দুটি শীতের সোয়েটার হারিয়ে গেছে। যদি সে পর্যন্ত থাকতে হয়, তাহলে আবার সোয়েটার জোগাড় করে নিতে হবে।’
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর বলছেন, জুনাইদ আহ্মেদ পলকের এ কথাগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি আলোচনায় থাকার জন্য এসব বানোয়াট কথা বলছেন।
বিভিন্ন হত্যা মামলায় আজ সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহ্মেদ পলক, তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শুনানি শেষ হলে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর মক্কেল কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর শীতের দুটি সোয়েটার কারাগার থেকে হারিয়ে গেছে।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে জুনাইদ আহ্মেদ পলককে যখন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বারান্দায় আনা হয়, তখন একজন সংবাদকর্মী তাঁর কাছে জানতে চান, ‘পলক ভাই, আপনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গতকাল দুই হাত এক করে কি বোঝাতে চেয়েছেন?’ এ সময় পলক হেসে ঘাড় দুদিকে ঘোরান।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পলকের হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। পলকের ডান পাশে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তাঁর ডানহাতে পরানো ছিল হাতকড়া। এ সময় পলক তাঁর দুজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
পলক তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিনের উদ্দেশে বলতে শুরু করেন, ‘আমাকে দু-এক দিনের মধ্যেই গাজীপুরের আদালতে তোলা হবে। তোমাদের সেখানে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মামলার কাগজগুলো তুলে রেখো। নারায়ণগঞ্জের আদালতেও তোমরা যেও না। সেখানে অনেক বেশি সিনক্রিয়েট হয়।’
কারাগার থেকে পলকের সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আলোচনায় থাকার জন্য জুনাইদ আহ্মেদ পলক উদ্ভট সব দাবি করে থাকেন। এই সোয়েটার হারিয়ে যাওয়ার তথ্য, এমন একটি উদ্ভট দাবি। কারাগার থেকে কোনো বন্দীর জিনিসপত্র হারানোর সুযোগ নেই।’
কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, একজন বন্দীকে যদি কারাগার থেকে কোনো কাপড়চোপড় বাইরে নিয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে কারাগারে সেই কাপড়চোপড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে কারারক্ষীরা তাঁর স্বজনদের কাছে কাপড় হস্তান্তর করেন।
এ ব্যাপারে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘জুনাইদ আহ্মেদ পলক, শাজাহান খানরা প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করছেন। বিতর্কিত করার জন্যই তাঁরা রাজাকার শব্দ উচ্চারণ করেছেন। পলক বলছেন, কারাগার থেকে সোয়েটার চুরি হয়ে গেছে। এগুলো বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা।’
এর আগে পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁর মক্কেল কারাগারে ডিভিশনের সুযোগ পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে কারা তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জুনাইদ আহ্মেদ পলক আমার কারাগারের চতুর্থ তলায় থাকেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী তিনি প্রথম শ্রেণির একজন কারাবন্দী। প্রথম শ্রেণির কারাবন্দী যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, তিনিও ঠিক একই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাঁর আইনজীবী তথ্যও সঠিক নয়।’
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই কাঠগড়ায় তখন আনা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। গত ৮ এপ্রিল তুরিন আফরোজকে যখন আদালতে তোলা হয়েছিল, সেদিন নিজেই তাঁর শুনানি করেন। কোনো আইনজীবী ছিল না। আজও তাঁকে কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শাজাহান খানকে আজ শাহবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শুনানির সময় তিনি কাঠগড়ায় কোনো কথা বলেননি।
আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু আদালত কক্ষে চুপচাপ ছিলেন। তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে হেলমেট পরিয়ে রাখা হয়। তাঁরা আইনজীবী ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি।

কারাগারে পলকের সেলে নেই আলো বাতাস, পড়ে বৃষ্টির পানি :
কারাগারে যেখানে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে রাখা হয়েছে সেই ঘরে পর্যাপ্ত ‘আলো বাতাস নেই’ এবং বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে ‘পানিও পড়ে’ বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী তরিকুল ইসলাম।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন রাব্বি হত্যা মামলায় পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের উপরে শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত এই আদেশ দেয়।
এর আগে, আইনজীবী তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার সময় কারাগারে তার কি ধরনের অসুবিধা হচ্ছে সে বিষয়ে তাকে জানান পলক। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তরিকুল ইসলাম।
অভিযোগ করে তরিকুল ইসলাম বলেন, তাকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো বাতাসের সুযোগ নেই। বৃষ্টিতে রুম ভিজে যায় থাকার অনুপযোগী জায়গায় তাকে রাখা হয়েছে, যা অমানবিক। মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সকালে প্রিজন করে তাকে (পলক) আদালতে হাজির করা হয়। তবে বৃষ্টি নামায় প্রিজন ভ্যানের ভেন্টিলেটর দিয়ে পানি আসায় তিনি ভিজে যান। তাকে কাশিমপুর কারাগারে হাইসিকিউরিটি সেলে রাখা হয়েছে, সেখানে বৃষ্টি এলে পানি ঢুকে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি আজ আমাদের বলেছেন।
শুনানির জন্য সকাল ৯টার দিকে পলককে আদালতে হাজির করা হয়, আর এজলাসে তোলা হয় ১০টার দিকে। ওই সময় সাংবাদিকরা কিছু কথা জিজ্ঞাসা করলেও সাড়া দেননি সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তিনি কেবল মাথা নাড়িয়েছেন। তবে তাকে ওই সময় হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে।