Saturday, 14 June 2025
The News Diplomats
আনিস আলমগীর ‘ :
Publish : 09:30 AM, 21 March 2025.
Digital Solutions Ltd

জনগণ স্থিতিশীলতা চায়, প্রতিদিন রক্ত দিতে কিংবা আন্দোলনে নামতে পারে না

জনগণ স্থিতিশীলতা চায়, প্রতিদিন রক্ত দিতে কিংবা আন্দোলনে নামতে পারে না

সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর

Publish : 09:30 AM, 21 March 2025.
আনিস আলমগীর ‘ :

‘আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না। আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক। আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরণের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার হাসনাত আবদুল্লাদের নিতে হবে।’
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই বার্তাটি জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের জানানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে হাসনাত আব্দুল্লার সাম্প্রতিক বক্তৃতা ও ফেইসবুক স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আগের দিন এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘উত্তরপাড়ার’ এই ইচ্ছা তারা পূরণ করতে দেবেন না। পরে রাতে ফেইসবুক পোস্টে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে জানান, কীভাবে তিনি বারবার এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন। তিনি নাকি বলেছেন—
"আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের (সেনাবাহিনী) নিতে হবে।"
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি কতটা যৌক্তিক?
হাসনাত আব্দুল্লার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তার দাবি হলো ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনের চেষ্টা চলছে, যা তিনি ভারত-সমর্থিত ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে, তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত? জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটা গ্রহণযোগ্য?
জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল কোটা বাতিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। জনগণ তখন রাস্তায় নেমেছিল, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিল। কিন্তু আন্দোলনের সময় কখনো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠেনি।
যদি আন্দোলনের কর্মীরা জানতেন যে তাদের সংগ্রামের লক্ষ্য একটি দলকে নিষিদ্ধ করা, তাহলে কি তারা একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তেন?
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে, কিন্তু গণতন্ত্রের মূল কাঠামো অনুযায়ী কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হলে তা আরও জটিলতা তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ করার পর স্থিতিশীলতা ফেরেনি, বরং নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।
‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’: সংস্কার নাকি ষড়যন্ত্র?
শেখ হাসিনার দুঃশাসন কিংবা শেখ পরিবারের লুটপাটের কারণে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে না। তবে দলটির ভেতরে শুদ্ধি আনার দাবি যৌক্তিক।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক সংস্কার যদি বাস্তবায়ন করা হয়, তবে সেটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা উচিত নয়। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন আক্তারের মতো নেতারা তুলনামূলক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী। তাই আওয়ামী লীগের অস্বচ্ছ, দুর্নীতিবাজ ও দুঃশাসনের জন্য দায়ী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা হলে আপত্তির কী থাকতে পারে?
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শেখ পরিবারের বিতর্কিত সদস্যদের যেন এই কাঠামোর অংশ করা না হয়। বিশেষ করে ফজলে নূর তাপসের মতো ব্যক্তিরা যদি এতে অন্তর্ভুক্ত হন (হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি অনুযায়ী), তাহলে এটাকে আর ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বলা যাবে না। বরং আগের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির পুনরাবৃত্তি হবে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে দেখিয়েছেন, যা বাহিনীর পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য শপথবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান।
সাম্প্রতিক সময়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় যে ভূমিকা পালন করেছে, তা প্রশংসনীয়। তারা রাজনৈতিক মতাদর্শগত লড়াই থেকে দূরে থেকে সংবিধান রক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হতে পারে।
রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথ নয়, গণতন্ত্রই সমাধান
বাস্তবতা হলো, দলীয় সংস্কার হতে পারে, নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে, কিন্তু একটি দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই বহিঃপ্রকাশ। জনগণ স্থিতিশীলতা চায়, প্রতিদিন রক্ত দিতে পারে না, প্রতিদিন আন্দোলনে নামতে পারে না।
রাজুতে বা শহীদ মিনারে প্রতিদিন জমায়েত হওয়ার দিন শেষ। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে গণতন্ত্রের পথেই—নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে নয়।
লেখক : আনিস আলমগীর, সিনিয়র সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

OPINION বিভাগের অন্যান্য খবর

শিরোনাম ইউনূস–তারেক বৈঠকে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা `সন্তুষ্ট’ শিরোনাম ইরান-ইসরায়েল সর্বাত্মক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা শিরোনাম ইরানের সেনাপ্রধান বাঘেরিসহ বহু শীর্ষ সামরিক-পারমাণবিক কর্মকর্তা নিহত শিরোনাম সংস্কার ও বিচারে অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে শিরোনাম ভারতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৪০ জনের বেশি শিরোনাম সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য ইউনূস-তারেক বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ