রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ
পলাতক ও সরকার প্রধানের কড়া সমালোচক রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্র জানিয়েছে, একজন পেশাদার কূটনীতিকের অপেশাদার আচরণের জন্য তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্থ করার প্রক্রিয়া চলছে।
হারুন আল রশিদ ছিলেন কানাডায় ডেপুটি হাই কমিশনার। গত বছরের শুরুর দিকে তিনি মরক্কোয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ পান। গত এক বছর তিনি মরক্কোয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করলেও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে অটোয়াতেই অবস্থান করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, হারুন আল রশিদকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দেশে ফিরে ‘অনতিবিলম্বে’পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নানা অজুহাতে দেশে ফেরা বিলম্বিত করে তিনি মরক্কো থেকে ফেব্রুয়ারীর শেষ দিকে চলে যান কানাডায়। সুত্রমতে, বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মতবিরোধ রয়েছে। তবে কি নিয়ে মতবিরোধ তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। সুত্র আরো জানায়, হারুন আল রশিদ মনে করেন, মরক্কোয় মাত্র এক বছর দায়িত্ব পালনের মাথায় তাকে প্রত্যাহার করার কথা নয়। তাছাড়া মরক্কো কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিশনও নয়। ব্যক্তিগত মতবিরোধের কারণে পররাষ্ট্র সচিব অত্যন্ত কৌশলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ভুল বুঝিয়ে তাকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় যোগদানের নির্দেশ দেন। তার ধারণা, ঢাকায় ফিরলে পররাষ্ট্র সচিব তাকে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর আখ্যা দিয়ে নানা ধরণের হয়রাণী করতে পারেন। অবশ্য এটাও সঠিক যে, তিনি বিগত সরকারের পক্ষে খুবই সক্রিয় ছিলেন।
সুত্র আরো জানায়, রিকলের পর হারুন আল রশিদ ঢাকায় ফেরা নিরাপদ মনে করেননি। তিনি মরক্কো থেকে চলে যান কানাডার অটোয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে। একজন রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের পর গত ৩ মাস কেন তিনি পরবর্তি কর্মস্থলে যোগ দেননি, কিংবা কোথায় পালিয়ে গেছেন, কি করছেন-এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা ছিলো না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। শুক্রবার ফেসবুকে অন্তর্বর্ত্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কড়া সমালোচনা করে পোস্ট দেয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের ঘুম ভাঙে।
হারুন আল রশিদ নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ড. ইউনূসের অধীনে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত বাংলাদেশ—বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক’। ঢাকায় না এসে কানাডায় চলে যাওয়া বাংলাদেশের এই পেশাদার কূটনীতিক বলছেন, ‘৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।’প্রায় তিন মাস আগে সরকারের দাপ্তরিক আদেশ অগ্রাহ্য করে অন্য দেশে চলে গিয়ে নিজেকে ‘নির্বাসিত’ দাবি করা এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে সরকার।
সাবেক কয়েকজন কূটনীতিক মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদের মন্ত্রণালয়ের আদেশ অগ্রাহ্য করে অন্য দেশে চলে যাওয়া এবং সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিষোদ্গারকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো কূটনীতিকের এমন ভূমিকা অকল্পনীয় বলে তাঁদের মত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গ টেনে সাবেক একাধিক কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, ডিসেম্বরে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিয়ে এই তিন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো হাত গুটিয়ে বসে ছিল। তা ছাড়া ঢাকায় না এসে প্রায় আড়াই মাস মরক্কোর দায়িত্ব ছেড়ে তিনি কোথায় গেলেন, সেই খোঁজ কি মন্ত্রণালয় নিয়েছিল? আর তিনি যে কানাডায় গেলেন, এটা কি ছুটি নিয়ে গেলেন? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো এ বিষয়ে দায় এড়াতে পারে না। কাজেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, সেটা অনেক অনেক দেরিতে নেওয়া হলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মরক্কোতে বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে একটি লেখা পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি পূর্ববর্তী নিপীড়ক ফ্যাসিবাদী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গত ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমে নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা করেছেন। পোস্টে হারুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এরূপ রচনা লেখকের গোপন উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পরিবর্তে তিনি কানাডায় চলে যান এবং সেখান থেকে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজেকে ‘নির্যাতিত কূটনীতিক’, ‘নির্বাসিত ঔপন্যাসিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা মূলত বিদেশে সহানুভূতি অর্জনের অভিপ্রায়ে করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, মন্ত্রণালয় তার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয় না এবং ভবিষ্যতেও যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Editor in Chief
Dulal Ahmed Chowdhury
News
Email: news@newsdiplomats.com
Advertisement
Email: ads@newsdiplomats.com
© The_News_Diplomats || Published from Canada.