বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগের একটি মূল জায়গাজুড়ে’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাপ্রধানদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি সফররত তুলসী গ্যাবার্ড আজ সোমবার এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সারা বিশ্বে ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের’ ওপর নজর রাখছে এবং একে পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড।
এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। বাংলাদেশে ‘ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী উপাদানের’ উত্থান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে; কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।
‘ইসলামিক খিলাফতের’ আদর্শ নিয়ে কথা বলেন তুলসী গ্যাবার্ড। উগ্রপন্থী উপাদান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বৈশ্বিকভাবে কেমন করে এ ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে, তা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। এতে অবশ্যই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছাড়া অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে। তারা এটা সন্ত্রাস ও অন্যান্য সহিংস পন্থায় বাস্তবায়নের পথ বেছে নেয়।
তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের আদর্শকে শনাক্ত ও পরাজিত করা এবং তিনি যেটাকে ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ’ বলেন, সেটিকে নির্মূল করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘খুব ভালো বন্ধু’ এবং তাঁরা অভিন্ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের ওপর আলোকপাত করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তুলসী গ্যাবার্ড। বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থী সন্ত্রাসকে পরাজিত করা তাঁদের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এই মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে এবং (ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে) এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার এবং উভয় দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এর কেন্দ্রে থাকবে শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা।’
গত মাসে ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, সেখানে তাঁরা সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য যেসব হুমকি দেখা দিচ্ছে, সেগুলো মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে কথা বলেন। ওই বৈঠকেই একটি ‘শক্তিশালী ভারত–যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের’ লক্ষ্য ও সুর নির্ধারিত হয় বলে গতকাল সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন তুলসী গ্যাবার্ড।
তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে সরকারের কড়া প্রতিবাদ :
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামিক খিলাফতকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকার সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের “নিপীড়ন ও হত্যা” করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।‘
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলে বাংলাদেশ সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিবৃতিতে উল্লেখ করে, তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশকে অন্যায় ও অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে সরকার দাবি করেছে, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এটি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে।
বাংলাদেশকে ভিত্তিহীনভাবে ‘ইসলামিক খিলাফত’–এর সঙ্গে যুক্ত করার অর্থ হলো বাংলাদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে দেখা; যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসলামিক খিলাফত’ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করে, রাজনৈতিক নেতাদের ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার আগে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখা এবং ক্ষতিকর গৎবাঁধা ধারণা ও ভীতি ছড়ানো বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার মতো কোনো কিছু বলা থেকে বিরত থাকা।
সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে যৌথ বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাস্তব তথ্য ও সব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপ অংশগ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
NEWSDIPLOMATS.COM
The Latest Breaking News
Dulal Ahmed Chowdhury
Editor in Chief
Email: dulalca73@gmail.com