আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
আসাম থেকে বিদেশী বিতাড়নের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ১৯৫০ সালের ইমিগ্রেশন (এক্সপালসন) অ্যাক্টের মাধ্যমে পুশব্যাক করবে। কোনো বিদেশী চিহ্নিত হলেই তাকে আর ট্রাইবুনালে না পাঠিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হবে। এজন্য রাজ্য সরকার একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাই এমন তথ্য জানিয়েছেন। আর হিমন্তের এমন মন্তব্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আসামে বসবাসকারী পূর্ববঙ্গীয় মূলের বাংলাভাষী মুসলিমরা।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আসামে বিদেশি বিতাড়নের ভিত্তিবর্ষ হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত্রি। এই ভিত্তিবর্ষকে প্রত্যাখ্যান জানিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা চলাকালে বেঞ্চ বলেছিল যে, ১৯৫০ সালের ইমিগ্রেশন (এক্সপালসন) অ্যাক্ট এখনও বলবৎ রয়েছে। আসাম সরকার ইচ্ছে করলে এই আইনের মাধ্যমেও বিদেশী বিতাড়ন করতে পারে। কিন্তু সরকারপক্ষীয় আইনজীবীরা এই বিষয়টি রাজ্য সরকারকে অবগত করেননি। সরকারও সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের এমন নিদান সম্পর্কে মনোযোগী ছিল না। কিন্তু অতিসম্প্রতি রাজ্য সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে এবং এই আইনের বলেই বিদেশী বিতাড়ন করবে। তাও পুশব্যাক করে।
ঘটনা হচ্ছে, আসামে বিদেশি সমস্যা নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এই সমস্যা নিয়ে আসাম অনেকবার জ্বলেছে। দাঙ্গা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অনেক আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে। শুধু গৌহাটি হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এ সংক্রান্ত সহস্রাধিক মামলা রয়েছে। নিম্ন আদালত অথবা ট্রাইবুনালের মামলা মিলে সংখ্যাটা ঊর্ধ্বমুখী হবে। একটা সময় ছিল, বর্ডার পুলিশ যাকে তাকে ধরেই জেলে পুরে দিত। অথবা পুশব্যাক করতো। তাই ১৯৮৩ সালে ভারত সরকার ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস্ (ডিটারমিনেশন বাই ট্রাইবুনাল) সংক্ষেপে আইএম(ডিটি) অ্যাক্ট পাশ করে। ওই আইনে বলা হয়েছিল যে, রাজ্য সরকার অথবা আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখা যদি কাউকে বিদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করে তাহলে সংশ্লিষ্টকে আদালতে বিদেশী প্রতিপন্ন করার দায় বর্তাবে সরকারপক্ষেরই। কিন্তু এই আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সারা আসাম ছাত্র সংস্থার (আসু) প্রাক্তন সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়াল। ২০১৬ সালে তিনি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনটি বাতিল করে দেয়। এই ঘটনায় উৎফল্লিত আসামের জাতীয়তাবাদীরা সোনোয়ালকে ‘জাতীয় বীরের’ মর্যাদা দেন। এই মুহূর্তে সোনোয়াল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
আইএম (ডিটি) পরবর্তী ঘটনায় বর্ডার পুলিশ সন্দেহজনক বিদেশীদের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করে ট্রাইবুনালে পাঠাত। ট্রাইবুনাল সংশ্লিষ্টকে নোটিশ পাঠিয়ে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার সপক্ষে নথিপত্র চেয়ে পাঠাত। যদি ট্রাইবুনাল কাউকে বিদেশী বলে ঘোষণা করে দিত, তবুও এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট এবং হাইকোর্টের পরে সুপ্রিমকোর্টে আপিল দায়ের করার সুযোগ ছিল। এখনও অগুনতি মামলা হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে বিচারের জন্য ঝুলে রয়েছে। কিন্তু হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এখন বলছেন, শুধুমাত্র আদালতে যাদের মামলা রয়েছে, তাদের ব্যতীত অন্য চিহ্নিত বিদেশীদের ট্রাইবুনালে না পাঠিয়ে সরাসরি পুশব্যাক করে দেওয়া হবে। এতে আতঙ্কিত আসামের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।
বাংলাদেশে ‘পুশ ইনে’র অভিযোগ করলেন ইউনুস আলী
আসামের পুলিশ ‘অবৈধভাবে’সেখানকার মানুষকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের মধ্যেই আসামের ২৬ বছর বয়সী এক যুবক তাঁর মাকে বেআইনিভাবে আটক করার অভিযোগ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনুস আলী নামের ওই যুবক তাঁর মা মনোয়ারা বেওয়াকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর মাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, আসামের কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারীদের সীমান্ত এলাকায় আটক করে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
ইউনুস আলীর আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মনোয়ারা বেওয়াকে প্রথমে ধুবড়ি থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। এর পর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২৪ মে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল, যা থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁকে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, মনোয়ারা বেওয়াকে এর আগেও আসামের একটি ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল’বা বিদেশি চিহ্নিতকরণ আদালত ‘অবৈধ অভিবাসী বা বিদেশি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সে সময় তাঁকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মনোয়ারা বেওয়া। তবে গুয়াহাটি হাইকোর্টও এই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিল। এরপর ২০১৭ সালে মনোয়ারা বেওয়া সুপ্রিম কোর্টে একটি ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ (এএলপি) দায়ের করে এই রায় চ্যালেঞ্জ করেন, যা এখনো বিচারাধীন।